নৌ-শ্রমিকদের কর্মবিরতি ৪৫ ঘণ্টা পর স্থগিত

জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদঘাটন ও বিচার দাবি

জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদঘাটন ও বিচার দাবিতে নৌ-শ্রমিকদের ৪৫ ঘণ্টা কর্মবিরতি ছিল, শনিবার রাতে তারা কর্মবিরতি স্থগিত করে

রাজিব শর্মা »

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস ও ডিজি শিপিংয়ের অনুরোধে ৪৫ ঘণ্টা পর নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১০টায় কর্মবিরতি স্থগিত করার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে জানান নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা নবী আলম।
তিনি জানান, শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে সরকারের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আবারও আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় পক্ষ।
তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে।
চাঁদপুরে একটি জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম বন্দরেও নৌযান শ্রমিকের কর্মবিরতি অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য ও জ্বালানি খালাস এবং তা স্থানীয় নদীপথে সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছিল প্রায় ১৬ লাখ টন আমদানি করা পণ্য। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়।
কর্মবিরতি স্থগিত করার আগে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছিল, এমভি আল-বাখেরা জাহাজে মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণার দাবি এবং সব নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হওয়ার কারণে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এসময় তারা আরও জানিয়েছিল, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর আজ রোববার শ্রমিকদের সঙ্গে বসার কথা বললেও তাতে রাজি ছিল না শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ মাদার ভ্যাসেল, সাগর, নদী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৭টি ঘাটে ৭৩৮টি জাহাজ ১০ লাখ ১১ হাজার ২৩৫ টন আমদানি পণ্য বোঝাই করে বসে আছে কর্মবিরতির কারণে। আর বহির্নোঙরের কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন অ্যাংকরেজে ২০টি মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজে) খালাসের অপেক্ষায় আছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০০ টন। ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর বিডব্লিউটিসিসি থেকে সিরিয়াল নেওয়া ৬২টি জাহাজ খালি অবস্থায় বসে আছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহার হলে তারা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য লোড করে গন্তব্যে যাবে। শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে আরও ৩৫টি জাহাজ ১ লাখ ২৫ হাজার ১৫০ টন পণ্য বোঝাই করে গন্তব্যে যেতে পারছিল না।
আটকে থাকা পণ্যের মধ্যে রয়েছে আমদানি করা গম, মসুর ডাল, মটর ডাল, সয়াবিন বীজ, সার, কয়লা ও সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, জ্বালানি তেলসহ দেশের সবগুলো বিমান বন্দরের বিমানের জন্য জেড-ফুয়েল পরিবহনও বন্ধ ছিল।
কর্মবিরতি চলাকালীন ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অব চিটাগং (আইভোয়াক) এর মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের কর্মবিরতি দ্রুত প্রত্যাহার বা স্থগিত করা হলে দেশের জন্য মঙ্গল। বন্দরের বহির্নোঙরে যে বড় বড় জাহাজগুলো অপেক্ষমাণ আছে, সেগুলোর প্রতিটির দিনপ্রতি ডেমারেজ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার। এছাড়া আটশ’ লাইটার জাহাজে যেসব পণ্য আটকা পড়েছে তাও উদ্বেগজনক।
এদিকে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এবিসি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আরিফ জানান, বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকলে জাহাজের যে ডেমারেজ উঠে, এই বাড়তি ব্যয় আমদানিকারককে বহন করতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে। এরমধ্যে খাদ্যপণ্যে প্রভাবটা বেশি পড়ার সম্ভাবনা থাকে।