সুপ্রভাত ডেস্ক »
শ্রম আইন লঙ্ঘন ও কর ফাঁকির মামলার আসামি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতির পেছনে ‘তথ্যের ঘাটতি’ থাকতে পারে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, কোনো ‘হয়রানিমূলক কাজ’ সরকার করেনি। শ্রমিকদের মুনাফার ভাগ না দেওয়ায় এবং কর ফাঁকি দেওয়ায় দুটি মামলা হয়েছে।
‘এসব ব্যাপারে, বোধহয় যারা চিঠিপত্র লিখেছেন, তারা হয়ত এটা জানেনও না। তারা ভাবছেন, হয়ত কোনো রাজনৈতিক কারণে উনাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তো, আমি আশা করব যে, যারা চিঠি লিখেছেন এবং তারা যদি জানতে চান, অবশ্যই আমরা তাদেরকে এই তথ্যগুলো পৌঁছে দেব।’
মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বোধহয় মনে করছেন, উনাকে রাজনৈতিক কারণে কিংবা অন্যবিধ কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা যতদূর জানি যে, কেইসগুলো সরকার করে নাই।দুনিয়াতে বহু নোবেল বিজয়ী আছে, তাদের শাস্তিও হয়েছে, এদের ভূরি ভূরি উদাহরণ (আছে)।’ খবর বিডিনিউজের।
শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে চলার প্রেক্ষাপটে ১০০ নোবেল বিজয়ী এবং বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ওই বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে ইউনূস ‘কারারুদ্ধ হতে পারেন’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিভিক কারেজ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সোমবার ওই বিবৃতি আসে। ‘প্রটেক্ট ইউনূস’ নামে একটি প্রচারাভিযানও শুরু করেছে সংগঠনটি।
প্রচারাভিযানের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স-এ লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
হিলারির ওই আহ্বানের সূত্র ধরে করা প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ তথ্য চাইলে সরকার তা দেবে। তবে, এ নিয়ে কোনো কূটনৈতিক ব্রিফিং আয়োজনের পরিকল্পনা সরকারের নেই।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে বোধহয়, ইনফরমেশন গ্যাপটা আছে, অজ্ঞতার কারণ আছে। আমরা স্বউদ্যোগে এটার উপর কনফারেন্সৃ এগুলো লিগ্যাল ইস্যু, এর উপরে আমরা করতে চাই না।’
মামলার বিষয়ে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আদালত খুবই স্বাধীন আদালত। বিদেশি বড় বড় নেতারা যদি বলেন, মামলা উঠায়া নাও, আমাদের জন্য এটা সম্ভব না। কারণ আমাদের বিচারব্যবস্থা খুবই স্বাধীন। তারা যদি মনে করে, এই মামলার মেরিট নাই, তাহলে তারা সেটা করতে পারে। আমাদের এখানে কিছুই করার নাই।’
দুটি মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কেইস হচ্ছে, উনার কোম্পানি যে মুনাফা করেছিল, আমি যতদূর জানি, দুদকের এরা ভালো বলতে পারবে, মুনাফা করেছিল, সেই মুনাফার একটা অংশ শ্রমিকদের নাকি দিতে হয়, এটা বাংলাদেশের আইন। যে, আপনি যদি মুনাফা করেন, তার একটা অংশ শ্রমিকদের দিতে হয়। ৫% মুনাফা নাকি শ্রমিকদের সাথে শেয়ার করতে হয়।’
‘দুর্ভাজনকভাবে, যেটা শুনেছি যে, উনার কোম্পানিগুলো উনার শ্রমিকদের ঠকিয়েছে, তারা শেয়ার করে নাই। এটা আদালতই ঠিক করবে। আদালতের বিষয়ে আমার বলা উচিত না।’
অনেক মুনাফা করেও কর ফাঁকি দেওয়ায় দ্বিতীয় মামলার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, ‘লাভ করলে পরে দুনিয়ার সব দেশের নিয়ম হলো কর দেওয়া। উনার কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দিয়েছে। যেহেতু উনি কোম্পানির প্রধান, সেজন্য মামলাটা উনার নামে হয়েছে। এটা দুনিয়ার সব দেশে, কর ফাঁকি হলে বড় ধরনের মামলা হয়।’
বিবৃতিদাতাদের উদ্দেশে মোমেন বলেন, ‘আমরা সেই নামিদামী লোকদের বলতে চাই যে, আমাদের দেশের আইনব্যবস্থা খুবই স্বচ্ছ। সেখানে আমাদের কিছু করার নাই। আদালত তাদের সিদ্ধান্ত নেবে, তাদেরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও আমাদের নাই।’
এসব বিবৃতিকে সরকার ‘চাপ বলে মনে করছে না’ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাপ মনে করি না। আমার মনে হয়, সেখানে ইনফরমেশন গ্যাপ আছে। এজন্য বড় বড় নেতা, তাদেরকে হয়ত কেউ বলেছেন যে, বাংলাদেশ এই রকম নামিদামি লোককে হয়রানি করছে। তো, একটা বিবৃতি দিয়ে দিয়েছে।’