নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ »
টেকনাফ বন্দরে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ১২০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন নুরুল ইসলাম। এরপর ১০ বছরে চাকরি করে অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন ৪৬০ কোটি টাকা। এসব অর্থ তিনি বন্দরে অবৈধভাবে পণ্য খালাস করে কামিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ৩৭টি বাড়ি ও জমি কিনেছেন। এছাড়া ঢাকার সাভার, টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন জমি।
র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোররাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে র্যাবের একটি দল তাকে আটক করে। এসময় বিপুল বিদেশি মুদ্রা, ইয়াবা ও জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, একসময় টেকনাফ বন্দরে ১২০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন নুরুল ইসলাম। বন্দরের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করলেও অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে তার পদে অন্য আরেকজনকে চাকরি দেন। আর অবৈধ উপায়ে উপার্জন করা অর্থ দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অঢেল সম্পত্তি কেনেন।
মোহাম্মদপুরের হাজি দীন মোহাম্মদ রোডে তার সাড়ে চার কাঠা জমির উপর সাততলা ভবন রয়েছে। এছাড়া নবোদয় হাউজিংয়ে সাত কাঠা জমির উপর সাততলা বাড়ি, ঢাকা উদ্যানে নয় কাঠা জমি ও ১৭টি দোকান রয়েছে। যার মুল্য ১৫ কোটি টাকা। মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা উদ্যানে চার কাঠা জমি ও দুইতলা ভবন, একতা হাউজিংয়ে চার কাঠা জমি, হাজী দিল সড়কে ১১ কাঠা ও দুই তলা সাতটি দোকান, নবোদয় হাউজিংয়ে চার কাঠা জমি ও বাড়ি রয়েছে। এমন অনেক সম্পদের খোঁজ র্যাব পেয়েছে। সব মিলিয়ে নুরুল ইসলামের ৩৭টি জায়গা ও বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে। ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য মিলেছে।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপার্জিত কোটি কোটি টাকাকে হালাল করতে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠান গড়িয়ে তুলে নুরুল।
সামান্য কম্পিউটার অপারেটর থেকে কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন নুরুল, সে ব্যাপারে র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করার সময় বড় বড় ব্যবসায়ী, বন্দরে যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তিনি তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ আদায় করেন। কীভাবে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যায়, সেসব কৌশল তিনি ভালোভাবে জানেন। মূলত অবৈধ সম্পদকে বৈধ হিসেবে দেখানোর জন্য ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত। গত বছর তিনি নাম লেখান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়।
টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসায় নুরুল জড়িত বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার বাসা থেকে সাড়ে চার হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। ঢাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নুরুল ইসলাম কম সম্পদ রেখেছেন নিজের নামে। বেশির ভাগ সম্পদ রেখেছেন তার স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে। এখনো নুরুল টেকনাফ বন্দরের দালালি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্প্রতি নুরুল ঢাকার সাভারে তিন একর জমির ওপর একটি পার্ক বানানোর কাজে হাত দেন। একটি জাহাজও কেনার চেষ্টা করেছিলেন।
নুরুলের ‘আলাদিনের চেরাগ’
১২০ টাকা বেতনে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক !