নিশুর বন্ধু লালু

জুয়েল আশরাফ »

নিশু একটা ছোট ছেলে, ক্লাস ফাইভে পড়ে। খুব দুষ্টু, খুব চঞ্চল, কিন্তু একটা ব্যাপারে সে একদমই আলাদা। সে পশুদের খুব ভালোবাসে। তাদের খাওয়ায়, তাদের সাথে খেলে, কখনো কখনো গল্পও করে। বিশেষ করে একটা কুকুর আছে, যার নাম লালু। লালু ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
লালু আগে রাস্তায় থাকত, ভীষণ রোগা আর কষ্টে দিন কাটত ওর। একদিন নিশু ওকে দেখতে পায় এবং তার পর থেকে প্রতিদিন খাবার দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে লালু ওর পিছু ছাড়ে না। স্কুল থেকে ফেরার পথে, খেলার মাঠে, বাজারে সব জায়গায় লালু নিশুর ছায়ার মতো থাকে। ওরা যেন দুই ভাই হয়ে গেছে।
একদিন হঠাৎ এলাকায় একটা গুজব রটে গেল লালুর নাকি রেবিস হয়েছে! কেউ একজন বলে দিয়েছিল, আর সবাই বিশ্বাস করল। কেউ ভাবল না যে, লালু আসলেই অসুস্থ কি না।
এলাকার এক খিটখিটে লোক, অতনু কাকু, যিনি পশুদের একদম পছন্দ করতেন না, তিনি বললেন, ‘এই কুকুর থাকলে সবাই বিপদে পড়বে! আমি একে সরিয়ে দেব!’ এবং হাতে তুলে নিলেন একটা লোহার রড। নিশু তো শুনে অবাক! সে ভাবতেই পারছে না, কেন এমন হচ্ছে?
অতনু কাকু যখন লালুর দিকে এগিয়ে এলেন, নিশু তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে লালুর সামনে দাঁড়াল। তার ছোট্ট দু’হাত দিয়ে বন্ধুর জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াল। বলল, ‘না কাকু! লালু খারাপ কিছু করেনি। ওকে মারবেন না!’
অতনু কাকু চিৎকার করে বললেন, ‘এটা তো বাচ্চা ছেলে, কিছু বোঝে না! সরে যা!’
কিন্তু তখনই সেখানে এলেন নিশুর বাবার বন্ধু রায় সাহেব। তিনি পশু চিকিৎসক। তিনি বললেন, ‘একটা পশুর রোগ আছে কি না, সেটা যাচাই না করেই কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না! আগে পরীক্ষা করতে হবে।’ তারপর তিনি লালুকে পরীক্ষা করলেন এবং জানালেন, ‘এটার কোনো রেবিস হয়নি। এটা শুধু একটু দুর্বল, কিছুদিন ধরে খাবার পাচ্ছিল না, তাই এমন দেখাচ্ছে।’
সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। নিশু আনন্দে কেঁদে ফেলল। এতক্ষণ ধরে সে লালুর জন্য ভয় পাচ্ছিল। অতনু কাকুও লজ্জিত হলেন, বুঝতে পারলেন, তিনি ভুল করেছিলেন।
এরপর থেকে, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, এলাকায় পথকুকুরদের সুরক্ষার জন্য একটা দল তৈরি করবে। যারা খেয়াল রাখবে, কেউ যেন তাদের কষ্ট না দেয়। নিশু সেই দলের ক্যাপ্টেন হল। আর লালু? সে তো আগের মতোই নিশুর পাশে থাকল, তার একমাত্র এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে।