সুপ্রভাত ডেস্ক »
মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে তিন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ইংরেজি ভাষার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়া স্টার জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে পেনাংয়ের বাটু মাউংয়ে তিন তলা ওই ভবন ধসের ঘটনায় আরো দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন চারজন। খবর বিডিনিউজের।
তারা সবাই বাংলাদেশি বলে পেনাংয়ের উপ-পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ উসুফ জান মোহাম্মদ জানিয়েছেন। তবে হতাহতদের নাম-ঠিকানা এখনও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি।
মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে উসুফ জান বলেন, নির্মাণাধীন ওই ভবনের ১২ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ১৪ টন ওজনের একটি বিম ধসে পড়লে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এর জেরে আরো ১৪টি বিম ভেঙে পড়ে।
ওই সময় সেখানে কাজ করছিলেন ১৮ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে নয়জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। উদ্ধারকর্মীরা পরে দুইজনের লাশ উদ্ধার করেন। আরেকজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
উসুফ জান মোহাম্মদ বলেন, গুরুতর আহত আরো দুজনকে পেনাং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বাকি চারজনকে উদ্ধারে কাজ চলছে।
তবে ভেঙে পড়া কংক্রিট বিমের ওজনের কারণে উদ্ধার কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পেনাং ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের উপ-পরিচালক জুলফাহমি সুতাজি ।
তিনি বলেন, ভারী কংক্রিটের কাঠামো সরিয়ে চাপা পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে আরো বড় যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।
রাতে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ার বিকট শব্দ শুনতে পান ঘটনাস্থলের আশেপাশের এলাকায় থাকা শ্রমিকরাও। তাদের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইখতিয়ার নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ঘটনাটিকে ভূমিকম্পের মত মনে হয়েছিল তার।
‘আমি পাশের একটি সাইটে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হল। ভবনটির মাঝের অংশে বিশাল কংক্রিটের বিম ভেঙে পড়ল। অন্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, বিমগুলো ভেঙে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ঘটনাস্থলের পাশেই চোখেমুখে ভয় আর দুঃশ্চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী মহসির। তাকে সাইটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
দুর্ঘটনা থেকে তিনি বেঁচে গেলেও বন্ধুদের ভাগ্য সহায় হয়নি বলে জানান মহসির।
মালয়েশিয়া স্টারকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটি দল নামাজ পড়তে গিয়েছিল। আর অন্য দলটি সাইটে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আমি সাইট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই ফোন পেয়ে এখানে ছুটে আসি।’
ঠিক কারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত না হলেও তাদের সবাইকে চিনতে পারবেন বলে জানান মহসির।
তিনি বলেন, ৩২ বছর ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় আছেন। তবে এই সাইটে কাজ শুরু করেছেন কয়েক মাস আগে।
৪৩ বছর বয়সী আরেক শ্রমিক মহিদুল ইসলাম দুর্ঘটনার আগেই সাইট থেকে চলে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন।
বাংলাদেশি এই শ্রমিক বলেন, ওয়্যারহাউসটির সবার উপরের তলায় আরও চারজনের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি। মাঝে বিরতির সময় হলে সেখান থেকে নেমে আসেন।
আমাদের অধিকাংশই এই প্রকল্পে তিন মাস ধরে কাজ করছে। আমার খুব খারাপ লাগছে, আমার বন্ধুদের হারাতে হল।’
 
				 
		

















































