নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই রোডম্যাপ ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা একটি তারিখ ঘোষণা করেছেন যা সুস্পষ্ট নয়। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আমরা কোনো মন্তব্য করবো না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু  বলেছেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে এখনো কিছু বলা হয়নি। আমরা চেয়েছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা আগে বলেছেন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আমাদের দলীয় ফোরামে বিশ্লেষণ করে জানানো হবে।

এদিকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামীর ডা. শফিকুর রহমানের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ’ তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।

তিনি আরও বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বিচার, সংস্কার, নির্বাচন এবং সরকারের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অবলোকন করেছি। বেশ কিছু দিন ধরে আমরা সরকারের কাছে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। আজ তার প্রতিফলন ঘটানোয় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাচ্ছি।

তিনি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আমাদের পূর্ববর্তী প্রস্তাব ও এ সংক্রান্ত পর্যালোচনার সাথে না মিললেও আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। আবহাওয়াজনিত কারণে এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। তবে প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোকপাত করেছেন এবং প্রাসঙ্গিকভাবে সময়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন তাতে আমরা উনার সরকারের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখতে চাই। আমরা আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপযোগী করা ও নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তার সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সংস্কার ও বিচারের একটা সন্তোষজনক অগ্রগতি এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য এপ্রিল পর্যন্ত সময়টা আপাত দৃষ্টিতে বিলম্বিত মনে হলেও সব পক্ষের এ ব‍্যাপারে ঐকমত‍্য প্রয়োজন। আশা করি, সরকার সবার ঐকমত্য তৈরিতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবেন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুলাই বলেছিলেন। আজ সুনির্দিষ্ট করেছেন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন। এ ছাড়া তিনি আগামী মাসে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। আশা করছি, সবাই গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ এবং ভারতীয় প্রভাবমুক্ত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে এবং ‘জুলাই সনদ’ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।