নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়তে থাকবে। তাই দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের নির্বাচন যত দেরি হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার বিরুদ্ধে দেশের লক্ষকোটি মানুষ এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছে, সেই স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই। সেই স্বৈরাচার তাদের দেশি-বিদেশি প্রভুদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচন যত দেরিতে হবে, এই দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসুবিধা, এই দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাব্যবস্থা, এই দেশের কৃষকদের সমস্যা, এই দেশের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা, এই দেশের বিচারব্যবস্থার সমস্যা, এই দেশের প্রশাসনের সমস্যা, যতগুলো সমস্যা এই স্বৈরাচার করে গিয়েছে, তা আরও বৃদ্ধি যাবে। একমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব ধীরে ধীরে দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা।’

তারেক রহমান বলেন, বিএনপিই প্রথম ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারগুলো টেকসই করতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজন। সংসদে বসেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন।

বিএনপির লড়াই এখনও শেষ হয়নি উল্লেখ করে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

নেতাকর্মীদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আচরণ হবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী।

একই দিন শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠানটি রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক রাজশাহী বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির যেসব নেতাকর্মী সামনের নির্বাচনে ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন- তারা সাবধান হন। সামনে ভয়ংকর অন্ধকার দেয়াল আছে।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলার বিষয়ে আইনজীবীর প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার পড়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে- তারা তো বসে নাই, তারা তো ষড়যন্ত্র করছে। যদি তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়- কেস (মামলা) তো উঠবেই না বরং নেতাকর্মীদের নামে দ্বিগুণ হয়ে জ্যামিতিক হারে ২০টা মামলা হয়ে যাবে। সেই সম্ভাবনাও কিন্তু আছে। সেই সম্ভাবনাকে যদি নস্যাৎ করে দিতে হয়, তাহলে আজকে থেকে আপনাদের প্রত্যেককেই কেয়ারফুল হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটাই টার্গেট হতে হবে, জনগণ, জনগণ অ্যান্ড জনগণ। এর বাইরে যদি আপনি কিছু চিন্তা করেন, তাহলে পতিত যে স্বৈরাচার তারা সফল হবে। তারা সফল হলে আইনজীবী সহকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী কেস আপনাদের মিটবে না। বরং মাথার ওপরে আরও ১০টি, ২০টি কেস চেপে বসবে। আপনাদের নিজেকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে উপায় একটায় জনগণের আস্থা অর্জন করেন। আপনার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে হলে উপায় একটায় জনগণের আস্থা অর্জন করেন। আপনি যখন রাজনৈতিক কর্মী হয়েছেন এর বাইরে কোনও উপায় নাই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আপনারা বিভিন্ন সভা ও দলীয় মিটিংয়ে বলেন- জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। একটি উদাহরণ দেয়- সহকর্মীবৃন্দ আপনার পরিবারের কোন সদস্যের প্রতি আস্থা রাখবেন। পরিবারে তো অনেক সদস্য থাকে। সবাই তো একরকম না। কার ওপরে আস্থা রাখেন? যে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে তার ওপরে আপনি আস্থা রাখেন- এখানে বিশাল বড় একটা কিন্তু আছে। সেই মর্যাদা, বিশ্বাস, আস্থা আপনি অর্জন করেছেন একটি পর্যায়ে। আজকের পর থেকে সামনের দিনগুলো জনগণের আস্থা আপনাদের ধরে রাখতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি- প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি, আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করবো। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করবো আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’