ছাপাখানায় চলছে দিন-রাত কাজ
রাজিব শর্মা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচন ঘিরে এখন প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার তৈরি, মাইকিংসহ নেতাকর্মীদের চা-নাস্তা খরচের নামে প্রার্থীরা হাতখুলে অর্থ ব্যয় করছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে কিছু ব্যবসায়। বিশেষ করে ছাপাখানা, চায়ের দোকানের ব্যবসা এখন রমরমা।
নগরীর ছাপাখানার গুরুত্বপূর্ণ স্থান আন্দরকিল্লা, সিরাজউদৌলাহ রোড, কদম মোবারক, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার তৈরিতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। এসব এলাকায় রয়েছে ৩০০টির বেশি ছাপাখানা। এগুলোতে কর্মচারীরা নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ছাপানো ও ব্যানার তৈরির কাজে ব্যস্ত। এছাড়া বেড়েছে মাইক-সাউন্ড সিস্টেমের ভাড়া ও বিক্রি। প্রচারের কাজে ব্যবহৃত বাহনগুলোরও কদর বেশ বেড়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তদের জন্য এলাকায় খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। অলিগলির প্রতিটি চা-নাস্তার দোকান এখন নির্বাচনী আড্ডায় মুখরিত।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রেস পাড়া খ্যাত আন্দরকিল্লার ছাপাখানাগুলোতে এখন দিন-রাত কাজ চলছে। বছরের অন্য সময় এসব ছাপাখানার কাজ চলে ঢিমেতালে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ও কার্ড ছাপানোর কাজ। দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় নির্বাচনী মৌসুমে কয়েক গুণ বেশি ব্যবসা হবে বলে আশাবাদী ছাপাখানার মালিকপক্ষ।
আন্দরকিল্লা জিএ ভববনে অবস্থিত এসবি প্রিন্টার্স। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. জাফর বলেন, কাগজের দাম বাড়াতেই গত দেড়বছর ধরে ব্যবসা ঝিমিয়ে চলছিল। নির্বাচনের আমেজে গত দুইদিন ধরে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের অর্ডার বাড়ছে। এতে ব্যবসায়ীরাও শ্রমিক বাড়িয়েছেন। তাই ছাপাখানায় কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে।
এদিকে বেচাকেনা বেড়েছে কাগজ-কালিসহ প্রিন্টে ব্যবহৃত নানা উপকরণের। আন্দরকিল্লা কাগজ ব্যবসায়ী মো. মাসুদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাগজ বিক্রি বেড়ে গেছে। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার ছাপাচ্ছেন। এ কারণে বেড়েছে কাগজের চাহিদা। পাশাপাশি প্রিন্টিং ব্যবসায়ের নানা উপকরণেরও। এভাবে ব্যবসা নির্বাচন পর্যন্ত চাঙা থাকবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
আন্দরকিল্লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, অনান্যবারের মতো এবারো নির্বাচনী প্রার্থীরা প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন বানানোর অর্ডার করছেন।
অলি-গলিতে মুখর চা-নাস্তার দোকান
নগরীর অলি-গলিতে বেড়েছে চা-নাস্তার দোকানে ভিড়। চায়ের দোকানে নির্বাচনী আড্ডায় মেতেছেন ভোটাররা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে কোলাহল ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ততই বেড়ে চলেছে।
আছদগঞ্জের চা বিক্রেতা মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের পোস্টার লাগানোর পর থেকে চায়ের ব্যবসা বেড়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে দোকান। একাধিক প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় লেগেই আছে। বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনাও। সবমিলে নির্বাচন ঘিরে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
মাইকেরও কদর বেড়েছে
অন্যদিকে প্রচারণার প্রধান হাতিয়ার মাইক ও সাউন্ড বক্সের কদরও বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী মজুদ করছে মাইক, সাউন্ডবক্সসহ নানা যন্ত্রপাতি। নির্বাচন ঘিরে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশাবাদী এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
আইস ফ্যাক্টরি রোডের মাইক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ প্রতিদিন মাইক বা সাউন্ডবক্স কেনেন না। নির্বাচন, পশুর বাজার, মেলা, সমাবেশ আসলে এসবের চাহিদা বাড়ে। যেহেতু জাতীয় নির্বাচন। অন্যান্য জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও মাইকের চাহিদা থাকবে। তবে গত দুদিন ধরে উপজেলা পর্যায়ের মাইক ব্যবসায়ীরা বেশকিছু নতুন মাইক ও যন্ত্রপাতির অর্ডার করেছেন।
বেড়েছে মিনিট্রাক ভাড়া
চাহিদা বেড়েছে প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মিনিট্রাক ও সিএনজিচালিত টেকসিরও। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘নির্বাচনী বখশিস’র নামে ভাড়াও বাড়িয়েছে এসব বাহনের চালকরা। গত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ মিনিট্রাকের ভাড়া বেড়েছে বলে প্রার্থীদের কর্মীদের।
কোতোয়ালীর এক প্রার্থীর সর্মথক বলেন, প্রচারণার জন্য দুদিন ধরে মিনিট্রাক খুঁজছি। কিন্তু চালকরা ভাড়া বাড়তি চাচ্ছে। তার মধ্যে মিনিট্রাক পাওয়াও যাচ্ছে না।
নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মিনি ট্রাক চালক মো. আসাদ বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক বেশি সময় দিতে হয়। প্রার্থীদের থেকে এখন বখশিস পাওয়ার সময়। তবে আমরা যে ভাড়া নিচ্ছি তা তেমন বেশি না। ’