নিরাপদ এবং উন্নত পরিবেশে পোশাক উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় বিশ্বস্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ। চীন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেটি তৈরি পোশাকের সরবরাহ চেইনে কমপ্লায়েন্সসহ সব ধরণের সেবা প্রদান করে থাকে, সেই প্রতিষ্ঠান কিউআইএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক নৈতিক মান নিরীক্ষা (এথিক্যাল অডিট) সূচকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ, প্রথম স্থানে রয়েছে তাইওয়ান। ভিয়েতনাম তৃতীয় স্থানে, চীন সপ্তম এবং ভারত ৮ম স্থানে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাকেঞ্জি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ এবং সরবরাহ চেইনে দায়িত্বশীলতা বিবেচনায় বাংলাদেশের পোশাকখাত এখন প্রথম সারির। একটি জাতীয় দৈনিকে এসব প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। কিউআইএমএ উৎপাদন ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান যাচাইয়ে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের বেতনÑভাতা ছুটিসহ অন্যান্য সুবিধা এবং সামাজিক ও পরিবেশগত নিরাপত্তার ভিত্তিতে নিরীক্ষা পরিচালনা করে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপদ কর্মপরিবেশ সম্পর্কিত দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। এই বিশ্বস্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে, রপ্তানি আদেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, উদ্যোক্তারা ক্রেতাদের সাথে পণ্যের দাম বাড়াতে দর কষাকষির সুযোগ পাবেন।
তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এই উন্নতির পেছনে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, বাংলাদেশ সরকার, বিদেশি ক্রেতাদের জোট প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের ভূমিকা রয়েছে। রানা প্লাজা ধস ও তাজরিন ফ্যাশনসের অগ্নিকা-ে বিপুল হতাহত ও মানবিক বিপর্যয়ের কয়েক বছরের মধ্যে শিল্প কারখানা অবকাঠামো সংস্কার, কর্ম পরিবেশের উন্নতি, শ্রম ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনে ক্রেতাদের আস্থা ফিরে পেয়েছে। সংস্কার অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে, সবুজ কারখানা অগ্রতালিকায় বাংলাদেশের কয়েকটি কারখানা স্থান পেয়েছে।
করোনাকালে প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, এই খাতে সরকারের প্রণোদনা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। উৎপাদন সচল থেকেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক কর্মচারীরা কাজ করছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির কথা বলা হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। তবে রপ্তানি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে পোশাক খাত। আশা করা যায় পোশাক খাতের উন্নতিতে আগামী বাজেটেও সুযোগ সুবিধা থাকবে।
আমরা আশা করি, পোশাক কারখানাগুলিতে কর্মপরিবেশের উন্নতিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি কারখানায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা এবং নিরাপদ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা পাবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের উৎপাদন দক্ষতা বাড়ায়, শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি দেয়। এটি শ্রম ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মতামত সম্পাদকীয়