নিরসনের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের

নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস-সুপ্রভাত

চারুকলা ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা

হুমাইরা তাজরিন »

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট অচলাবস্থা চলছে টানা ৫৫ দিন। মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে ক্লাস বর্জন করে মূল ফটকে তালা লাগিয়ে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ব্যতীত শিক্ষকসহ কাউকেই ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানান্তরের অন্তরায় হিসেবে আইনি জটিলতাই সামনে আসছে। তবে অচলাবস্থা নিরসনে প্রশাসনিক তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় চারুকলা ইন্সটিটিউট

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ‘চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে একীভূত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করার কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করে চিঠি দেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩২১তম এক্সট্রা অর্ডিনারি সভায় ২ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই লক্ষ্যে ‘প্রকল্প প্রতিবেদন’ প্রণয়নের জন্য গঠিত ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিরপ্রতিবেদন ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩২৫তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন হয় এবং প্রয়োজনীয় কার্যার্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রেরণ করা হয়।

‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু নির্দেশনাসহ ১৯৯৮ সালের ১৩ আগস্ট অনুমোদিত হয়। ১১ মার্চ ১৯৯৯ তারিখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বারক অনুযায়ী চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে একীভূত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উক্ত তারিখে বাংলাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে একীভূত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করার অভিযোগে চবি চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ (‘অপরাজেয় বাংলার’ ভাস্কর) ১৯৯৮ সালের ২৪ মে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২৫ এপ্রিল ১৯৯৯ তারিখে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে স্থগিতাদেশ জারি করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট উক্ত আদেশ খারিজ করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ আপিল বিভাগে ১৪ আগস্ট ২০০১ তারিখে লিভ পিটিশন দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ উক্ত লিভ পিটিশন ২০ জুলাই ২০০২ তারিখে খারিজ করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৫ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে চবি সিন্ডিকেটের ৪৬২তম সভার ৮৬ নং সিদ্ধান্তে ‘চট্টগ্রাম সরকারী চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালেয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে একীভূত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার’ চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মো. নোমান উর রশীদ স¦াক্ষরিত স্মারকে ‘চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে একীভূত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি চারুকলা কলেজ চট্টগ্রাম এর স্থাবরÑঅস্থাবর সকল সম্পদ ডিড অব গিফট এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। যেখানে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শুধুমাত্র চারুকলা ইন্সটিটিউট পরিচালনা করিতে থাকিবেন।’ কার্যত ২ আগস্ট ২০১০ তারিখ হতে চট্টগ্রাম শহরের ৭২১ বাদশা মিয়া সড়কে স্থাপিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউটে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য র্কাযক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালকের বক্তব্য

এ ব্যাপারে চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট এখন যে জায়গায় আছে, সে জায়গাটি স্থানান্তর করতে অনেক আইনগত জটিলতা রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১১ মার্চে যে গেজেট হয়েছে, সেখানে এ জায়গাটি শুধুমাত্র চারুকলা ইনস্টিটিউটের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন যদি গেজেট পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা অসম্ভব নয়। কিন্তু সেটি সময় সাপেক্ষ। শিক্ষার্থীরা যেভাবে বলছে, সেভাবে এক কথায় মূল ক্যাপাসে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আইন মেনেই ফিরতে হবে।’

আন্দোলনের গতিবিধি

গত ২ নভেম্বর শ্রেণিকক্ষের পোলেস্তারা খসে পড়াকে কেন্দ্র করে ২২দফা দাবি নিয়ে ইন্সটিটিউট সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। যেখানে ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, হল ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা (৩৫৩ জনের জন্য ১৩টি আসন-বিশিষ্ট একমাত্র ছাত্রাবাস), প্রতিটি ভবনে বিশুদ্ধ পানীয়, নিজস্ব বাস, খেলার মাঠ, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্ট-স্টেশনারি সরঞ্জাম, প্রজেক্টর ও পর্যাপ্ত সাউন্ড সিস্টেম, ওয়াই-ফাই সেবা চালু, শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক সংকট দূরীকরণ, আলোকায়ন, জেনারেটর চালু, ছাত্র-ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানো ইত্যাদি বিষয় দাবি হিসেবে উঠে আসে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া এবং কলা অনুষদের ডিন ড. মাহবুবুল হকের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসলে প্রশাসন তাদের অস্থায়ী সমাধানের পথ দেখায় বলে তারা জানান। পরবর্তীতে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এবং বাকি শিক্ষার্থীদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা পেতে ২২ দফাকে ১ দফায় (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরণ) পরিণত করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

৫ নভেম্বর উপার্চায বরাবর চিঠি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর ৭ নভেম্বর দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তার নিজ কার্যালয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৪ জন শিক্ষার্থীসহ চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী, শিক্ষক জসিমউদ্দীন, জাহেদ আলী চৌধুরী যুবরাজ, সুফিয়া বেগম ও উত্তম বড়ুয়া অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ড. মাহবুবুল হক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে কথা বললেও চারুকলার শিক্ষকেরা তাতে সায় দেননি। পরবর্তীতে বৈঠক থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলনে ফিরে যায়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আর কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ১০ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা নগরের বাদশা মিয়া সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ নভেম্বর সমস্যা নিরসনের জন্য একটি ‘চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর’ বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে।

কমিটি গঠনের ৫ দিন পরও কোনো অফিসিয়াল সভা না হলে, ১৬ নভেম্বর সকাল ৯ টায় ইনস্টিটিউটর মূল ফটকে তালা দেয় তারা। যেখানে ইনস্টিটিউটের কর্মচারী, কর্মকর্তা কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি তারা। সেদিনই প্রক্টোরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছাত্রদের দাবিগুলোকে লিখিত আকারে গ্রহণ করেন তারা।
২০ নভেম্বর বিকেল ৪টায় ১০জন শিক্ষক চারুকলা ইনস্টিটিউটর চলমান আন্দোলন সমাধানে গঠিত কমিটির কাগজপত্র নেওয়ার উদ্দেশ্যে ইনস্টিটিউটের ভিতরে প্রবেশ করেন। যার মধ্যে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী, ডেপুটি রেজস্ট্রিার এম এ সাকুরও ছিলেন। পরবর্তীতে তালা ভেঙে রুমে প্রবেশে ও ব্যক্তিগত কাগজপত্র সরানোর অভিযোগে শিক্ষকদের ইনস্টিটিউটের ভিতরে অবরুদ্ধ করে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১২টার দিকে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন ইনস্টিটিউটে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের বের করে আনেন।

৩০ নভেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউটর পক্ষ থেকে তৎকালীন পরিচালক প্রণব মিত্র স¦াক্ষরিত একটি চিঠি চবি প্রশাসনের নিকট পাঠানো হয যেখানে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ইতিহাসসহ বর্তমানে স্থানান্তরের অন্তরায়সমূহ তুলে ধরেন। চিঠিতে বর্তমান কলাও মানববিদ্যা অনুষদের ভৌত অবকাঠামো চারুকলা বিষয়ে পাঠদান ও গ্রহণের ব্যবহারিক স্টুডিওসমূহের নির্মাণশৈলী বা উপযোগিতার দিক থেকে কোনোভাবেই নির্মাণ করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চত করেন ইনস্টিটিউিটের সাবেক পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী। উল্লেখ্য, ৩০ নভেম্বর নিজের দায়িত্বকাল শেষ করেন প্রণব মিত্র চৌধুরী।

৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণের জন্য নগরের সিআরবি এলাকায় দীর্ঘ আলপনা আঁকেন শিক্ষার্থীরা। যেখানে ফুটে উঠে ‘চবি চারুকলা মূল কয়াম্পাসে প্রত্যার্বতন চাই’, ‘২১০০ একরে ফিরতে চাই’, ‘চবি চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে ফেরত চাই’ লেখা দাবি।
সর্বশষ ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মূল ক্যাম্পাসে অস্থায়ী ক্লাস শুরুর জন্য লিখিত আবেদন জানান আন্দোলনরত শির্ক্ষাথীরা।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য

জহির রায়হান অভি নামের আন্দোলনরত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘৪০ বছর চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে ছিলো, সেখান থেকে কোন প্রয়োজনে, কার প্রয়োজনে এখানে স্থানান্তর করা হলো? যেই সুযোগ সুবিধার  স্বপ্ন দেখিয়ে চারুকলা বিভাগকে ১২ বছর আগে এখানে আনা হয়েছিলো তার পরিবর্তনই বা কতটুকু হয়েছে? যেসব সম্পদের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চারুকলা কলেজের, যেগুলোর অবস্থা বর্তমানে শোচনীয়। স্যাঁতস্যাতে কক্ষগুলোতে অল্প দিনেই শিক্ষার্থীদের কাজ (শিল্পকর্ম) নষ্ট হয়ে যায়। এর আগেও দু দুটো আন্দোলন হওয়ার পরও এসব কিছুর কোনো পরির্বতন হয়নি। হস্তান্তর দলিল অনুযায়ী জায়গাটা শুধু চারুকলার ইনস্টিটিউটের ব্যবহারের জন্য, তবে উন্নয়নের কথা বলতে গেলে একটা নতুন ভবনই দেখি, যেটা ইনফরমেশন সেন্টার নামে শিক্ষকদের শহর ক্লাব, যেটি দলিল অনুযায়ী অবৈধ। শহরে নেই খাবারের হল ডাইনিং, খেলারমাঠ। ১২ বছরেও একাডেমিক ভবনে কোনো শৌচাগার নেই, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের উন্মুক্ত পরিবেশ নাই।’

আন্দোলনরত আরেকজন শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন, ‘হুট করে আমরা ১ দফায় গেছি বিষয়টা সেরকম না। আন্দোলনের শুরুতে যখন আমরা ভিসি (উপাচার্য) ম্যামের সাথে আলোচনা করি। বলা হলো ২২ দফার অনেক দাবি র্বতমান চারুকলা ক্যাম্পাসে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তখন আমরা ম্যামের উপস্থিতিতে ২২ দফাকে ১দফায় পরিণত করি। সুতরাং, হুট করে এটি ঘটেনি। তাই আমাদের এখানে কোনো স্বার্থ নেই। আমরা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের অধিকারগুলোর দাবি জানাচ্ছি। আর শিক্ষকেরা যে যেতে চাইছেন না সেখানে তাদের কোনো ব্যক্তি স্বার্থ আছে কিনা, সে বরং ব্যাপারে তদন্ত হোক।’

শিক্ষকদের মন্তব্য

চারুকলা ইনস্টিটিউটর প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক অলোক রায় বলেন, ‘মনোরম পরিবেশে ছবি আঁকতে হবে, একথার কোনা ভিত্তি নেই। এই আন্দোলনেরই কোনো ভিত্তি নেই। কেননা আর্ট এখন কেবল আবেগের বিষয়ে নেই। যে একটা সুন্দর ফুল আঁকলাম বা একটা নারীর সুন্দর ছবি আঁকলাম। আর্ট হলো এখন মেধার বিষয়। যারা এসব আন্দোলন করছে তার মধ্যে কতজন মনোযোগী ছাত্র আছে, সেটা দেখার বিষয়। এখানে থেকে শিল্পর্চচা নয়, রাজনীতি করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই কিছু ছাত্র তাদের রাজনীতির স্বার্থে এসব করছে।

গত ৭ ডিসেম্বর একটি জাতীয় গণমাধ্যমে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আবুল মনসুরের ‘চট্টগ্রাম চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর দাবি কতোটা যৌক্তিক’ র্শীষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় র্কতৃপক্ষ মূল ক্যাম্পাসে বর্তমান ইনস্টিটিউটের সমান সুবিধাযুক্ত ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে, তাহলেই কেবল সবার মতামত সাপেক্ষে স্থানান্তরের প্রশ্ন উঠতে পারে। ’
এ প্রসঙ্গে সুপ্রভাত প্রতিবেদককে তিনি জানান, ‘আমি আমার অবজারবেশন থেকে যা বলার বলেছি। কিন্তু আমি এখন ওখানকার শিক্ষকও না, ছাত্রও না। এটা ওদের বিষয়। ওরা ওদের মতো মিটমাট করবে।’
চারুকলা ইনস্টিটিউটের আরেক প্রবীণ শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে যে ইনফরমেশন সেন্টার করেছে এর সাথে ইনস্টিটিউটের কোনো সম্পর্ক নেই। সেই সময় একমাত্র আমিই এর ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছিলাম, সেটি ডিড অফ গিফট অনুযায়ী হয়নি। আর চারুকলার কাজের ধরন যেহেতু সৃষ্টিশীল, ফ্যাকাল্টির তত্ত্বাবধানে বিভাগ হিসেবে থাকলে তার কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। কিন্তু যখন ইনস্টিটিউট হিসেবে থাকে তখন কিছুটা মুক্তির স্বাধীনতা পায়। কাজ করতে সুবিধা হয়। আন্দোলনের শুরুতে ওদের ২২ দফা দাবির মধ্যে যে দাবিগুলো বাস্তবসম্মত ছিলো সেগুলো মেনে নেওয়া হয়েছিলো। যেখানে শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানীয়, স্বাস্থ্য-সম্মত খাবারের দাবি ছিলো। যারা ইনস্টিটিউট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এতোদিনেও এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ার পেছনে আমি মনে করি তাদের ব্যর্থতা রয়েছে। তাছাড়া স্থাপনার মধ্যে প্রাকৌশলিক যদি কোনো শংকা থাকে তাহলে সেটিও তদারকি করার কথা ছিলো।

আমার মতামত হলো, যদি বর্তমান স্থাপনার স্থায়িত্বে প্রশ্ন থাকে তাহলে পুরো স্পেসটাকে নিয়ে চারুকলা বিষয়টির আগামী ৫০ বছরের ভবিষ্যত চিন্তা করে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যেখানে সার্বিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। যদি বর্তমান অবস্থার চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থান নিশ্চিত করা না যায় তাহলে চারুকলা ওখানে কেন ফিরবে? তাছাড়া দাবি মেনে নেওয়ার পর কেন হুট করে ২২ দফা ১ দফায় পরিণত হলো, এর পিছনে অন্য কোনো বিষয় জড়িত কি-না এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য আমরা একটি তদন্ত কমিটি প্রত্যাশা করেছিলাম।’

বর্তমান পরিচালকের বক্তব্য

চারুকলা ইনস্টিটিউটের নতুন পরিচালক অধ্যাপক সুফিয়া বেগম বলেন, ‘কেউ তো চায় না তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকুক। শিক্ষকেরা কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেননি। তাহলে ওরা (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা) এটা বন্ধ করেছে। ওরা যেহেতু পড়াশোনা করছে, তাদের নিজেদের বুঝতে হবে। প্রশাসন তার মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে, আমরা সেটার অপেক্ষায় আছি।’

চবি প্রশাসনের বক্তব্য

সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর ছাত্র উপদেষ্টা, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর স্যারের সাথে শিক্ষার্থীদের কথা হয়। তারা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সাথে ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) মিটিংয়ে চারুকলার বিষয়ও ওঠে আসে।

এ ব্যাপারে চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে মাননীয় উপার্চায মহোদয়ের সাথে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন বিজয়ের মাসে আন্দোলন কেন? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,সবগুলো বিষয তিনি জানার চেষ্টা করছেন। তিনি বিষয়টি মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন। যেহেতু এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। তাই সবার সাথে বসে এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।’

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ড. মাহবুবুল হক বৈঠকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে তিনি তার মতামত থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বৈঠকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার কোনো কথা বলিনি। শুধু শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী ও সল্পমেয়াদী হিসেবে ভাগ করেছিলাম। বর্তমানে এ আন্দোলন নিয়ে প্রশাসনের কোনো বিষয়ে আমার কাছে আপডেট নাই। এ বিষয়ে কমিটি উত্তর দিতে পারবেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উনাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।