রাজিব শর্মা »
নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না। একটা পণ্যের দাম কমলে অপর তিনটি পণ্যের দাম বাড়ছে। সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশির ভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম তবে অপরিবর্তিত রয়েছে আমদানি পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। বাজারে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট ও বড় সাইজের পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা করে। দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ দরে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি পেঁয়াজের দাম রয়েছে অপবির্তিত আর দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়াও চায়না আদার দাম কমেছে ৪০ টাকা এবং ভারতীয় আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
চাক্তাইয়ের পচনশীল মসলাজাত পণ্য আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী মো. ফোরকান বলেন, ‘দেশী পেঁয়াজ বাজারে তেমন নেই। কৃষি পর্যায়ে খরচ বাড়তির কারণে দেশি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা দর কমাতে পারছে না। তবে সরবরাহ বাড়াতেই পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম সামনে আরও কমতে পারে।’
স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যাপ্ত সরবরাহ হলেও স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও।
প্রকারভেদে মাছের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা। ক্রেতারা মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। চাষের মাছও এখন বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা, রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতলা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সরপুঁটি ৫০০ টাকা এবং রূপচাঁদা মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতা রশিদুর রহমান বলেন, ‘এখন ১০০ টাকার নিচে কোন সবজি বাজারে নেই। ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে আসলেও চাহিদা অনুযায়ী তেমন কিছু কেনা যায় না।’
অপরিবর্তিত রয়েছে মাংস ও ডিমের বাজার
সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস ও ডিমের বাজার। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৯৫ টাকা, কক মুরগি ২৮৮ থেকে ২৯৮ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম ১৩৫ টাকা।
এদিকে কোরবানির ঈদের বাকি আরও প্রায় দেড় মাস। এর মধ্যেই মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে এলাচির দাম বাড়ছে লাফিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও হলুদের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। তাই কোরবানিকে সামনে রেখে আগেভাগেই বাজারে মসলার দাম বেড়ে গেছে।
অপরিবর্তিত প্রায়সব মুদিপণ্যের দাম
বাজারের মুদি দোকানের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে চিনির দাম এবং বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও খোলা সরিষার তেলের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা এবং খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট দেখা গেলেও বর্তমান বাজারে সংকট নেই সয়াবিনের তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে সয়াবিন বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
সবজির বাজারে দামের রকমফের
গতকাল নগরীর অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, টক টমেটো ১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৭০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে। এছাড়া নতুন আলু ১০০ টাকা, লাল আলু ৮০ টাকা, সাদা আলু ৮০ টাকা, বগুড়ার আলু ৯০ টাকা ও মুন্সিগঞ্জের আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ভারতীয় টমেটোর দাম কমেছে ২০ টাকা, টক টমেটোর দাম কমেছে ২০ টাকা, কাঁচা টমেটোর দাম কমেছে ১০ টাকা। আর নতুন আলুর দাম কমেছে ২০ টাকা, লাল, সাদা ও বগুড়া-মুন্সিগঞ্জের আলুর দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। এছাড়া অনান্য প্রায় সব সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে তেমন পরিবর্তন আসেনি।