নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগেই চাহিদা নিরুপণ করে পণ্য মজুদের পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
কমিটি অন্তত ৫/৬ মাস আগে পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ করে আমদানির মাধ্যমে ওইসব পণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থিতিশীল হলে অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, আগামী রমজানের নিত্যপণ্যের চাহিদা পূরণে আগাম কার্যক্রম গ্রহণ করার সুপারিশও করেছে সংসদীয় কমিটি।
সংসদীয় কমিটির এসব সুপারিশ সময়োপযোগী, বর্তমানে বাজারে চাল, আলু, মসল্লাসামগ্রী, ভোগ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকার চাল ও আলুর মজুদ সন্তোষজনক আছে বললেও এগুলোর দাম ঊর্ধ্বমুখি, মোটা চাল গরিব, নি¤œবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আলুর দাম সরকার বেঁধে দিলেও কোন কাজ হয়নি বরং বাজারে এখন আলু পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা বাজারে ৫০ টাকা কিংবা তারও বেশি এখন। আদা-রসুনের দাম আগে থেকেই বাড়তি। আমদানি সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম ৭০/৮০ টাকা কেজি প্রতি, আগের দামের চাইতে দ্বিগুণ।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা দেখা দিচ্ছে। মহামারি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে কেউ বলতে পারছে না। বিশ্বের অনেক দেশই এখন খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ গড়ে তুলছে। করোনাকালিন ত্রাণ সহায়তা, ওএমএস কার্যক্রম ও স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রি-এসবের কারণে সরকারের মজুদও কমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার দ্বিতীয় আঘাতের আশঙ্কা করে জনসাধারণ ও প্রশাসনকে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জরুরিভাবে। সুতরাং সামনের দিনগুলির কথা চিন্তা করে সরকারকে নিত্যপণ্যের মজুদ গড়ে তুলতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষে আগে ভাগেই আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। খাদ্য শস্য এবং নিত্যপণ্যের জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র হওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, সুতরাং এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজারমূল্য সহনীয় রাখতে অবশ্যই সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিসিবির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এর কার্যক্রম সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিতে হবে। টিসিবির জনবল কাঠামো, সংরক্ষণাগার বাড়াতে হবে। দেশের বাজারে অসাধু সিন্ডিকেট সক্রিয়, সুতরাং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করলে জনস্বার্থ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এটি মনে রাখতে হবে যে, জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা এখন সীমিত। টানাটানি করে সংসার চলছে, সুতরাং কোন অবস্থাতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ ব্যবসায়ীদের দেয়া যাবে না। মানুষের আয় বাড়াতে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনি সম্প্রসারণ, অবকাঠামো ও উন্নয়নকাজ, কাবিখা, টেস্ট রিলিফ অব্যাহত রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশাগত কাজে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এখানে শৈথিল্য, উদাসীনতা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। করোনার বিপর্যয়ে খাদ্য ও নিত্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলি রপ্তানিতে খুবই রক্ষণশীল মনোভাব নিচ্ছে-এই কারণে নানাভাবে আমদানির মাধ্যমে মজুদ গড়ে তোলা ও উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষ যারা কৃষি ও শিল্পে উৎপাদনে জড়িত, তাদের সকল প্রকার প্রণোদনা ও সহায়তা দিয়ে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, তবেই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের চক্রান্ত রোখা সম্ভব হবে।
মতামত সম্পাদকীয়