পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড়েছে নিউমোনিয়া রোগীর চাপ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নিউমোনিয়ায় ভর্তি রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে শিশু রোগ বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেডের তুলনায় রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় তিনগুণ। সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতালে নিউমোনিয়ার রোগী বেড়েছে। চট্টগ্রাম মা–শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও বেড়েছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
চমেক হাসপাতালে বেড সংকটের কারণে একটি বেডে একসাথে তিন থেকে চারজন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি অক্সিজেনের সঞ্চালন লাইন থেকে একাধিক শিশুকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিয়ম মতে–একজন শিশুকে একটি অক্সিজেন সঞ্চালন লাইন থেকে অক্সিজেন দেয়ার কথা। কিন্তু এখন নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বেশি হওয়ার কারণে একটি সঞ্চালন থেকে একাধিক রোগীকে দিতে হচ্ছে। এতে আমরা প্রয়োজন মতো রোগীকে মনিটরিং করে অক্সিজেন দিতে পারছি না। আনুপাতিক হারে অক্সিজেনের পরিমাণ কম–বেশি হতে পারে। চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত বেড আছে ১৩০টি। বর্তমানে গড়ে রোগী ভর্তি থাকছে ৪০০ এর কাছাকাছি। এছাড়া প্রতিদিন ১০০ জন নতুন রোগী আসছে, এরমধ্যে ৬০ জনই হচ্ছে নিউমোনিয়ার রোগী। চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেঁজুতি সরকার বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে দুই তৃতীয়াংশই এখন নিউমোনিয়ার রোগী।
বছরের এই সময়টাতে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে, এটি স্বাভাবিক। নিউমোনিয়া মূলত ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। রোগের শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সাধারণত যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়। এছাড়া প্রি–ম্যাচিউরড (সময়ের আগে জন্ম নেয়া) শিশুদেরও নিউমোনিয়া বেশি হয়। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত কারণেও নিউমোনিয়া হয়। এখন নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে গর্ভকালীর মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া স্বল্প বিরতিতে সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানের ওজন কম হতে পারে। মা–বাবা কেউ ধুমপায়ী হলে সন্তানের নিউমোনিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশু নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে। শিশু জন্মের পর থেকে ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বুকের দুধে নিউমোনিয়া প্রতিরোধক ভিটামিন–এ থাকে। ফিডারে কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না। নিয়মিত হাত ধোঁয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ঘরে বড় কারো সর্দি–কাশি হলে শিশুদের তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শিশুকে সরকার নির্ধারিত সব টিকা দিতে হবে। যেসব শিশুর ঘন ঘন সর্দি–কাশি হয় তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিতে হবে। এসব নিয়ম মেনে চললে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সেটা গেল প্রতিরোধের বিষয়। কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে কী হবে? আমরা তো শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি। স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশকে এসে আমরা এখনও আমাদের শিশুদের জন্য চিকিৎসা অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে। এত উন্নয়ন হলো দেশে অথচ চট্টগ্রামে শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে উঠল না তার চেয়ে দুঃখজনক যে আর কিছু হতে পারে না সে কথা রাষ্ট্র বুঝবে কবে?





















































