সুপ্রভাত ডেস্ক »
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারণসহ সোহেল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন আশীষ।
র্যাব বলছে, গত ২৮ মার্চ আশীষের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এর আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো।
১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশীষ রায় চৌধুরী ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো।
এই ক্লাবে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তিনি মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সখ্য তৈরি হয়।
সোহেল চৌধুরীকে হত্যার নেপথ্যের কারণ
ক্লাবের পাশে ছিল বনানী জামে মসজিদ। সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে বারবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর ধারণা ছিল ক্লাব ব্যবসা বাধাগ্রস্ত করতে সোহেল চৌধুরীর ইন্ধনে মসজিদ কমিটি এসব করছে।
২৪ বছর ধরে আসামি আশিষ রায় চৌধুরী পলাতক ছিলেন। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আশিষ জানান, তিনি ও বান্টি ইসলাম বাল্যকাল থেকে বন্ধু। ১৯৯৬ সালে আবেদীন টাওয়ারে তারা দুজনে ট্রাম্পস ক্লাবটি করেন। সেখানে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ হতো। ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইর অনুসারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ছিল। বান্টি ইসলাম ছিল আজিজ মোহাম্মদের ভাতিজির স্বামী। বিভিন্ন অপকর্মের পরিকল্পনা হতো এই ক্লাবে।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই এই ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এজন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম সোহেল চৌধুরীকে শিক্ষা দিতে চান। এজন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’
র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত শেষ রাতে সোহেল চৌধুরী গুলশানের ট্রাম্পস ক্লাবে যান। তখন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অন্যরা। সেখানে আদনান সিদ্দিকীও ছিল। তারা ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে যায়।’
মামলা ও বিচার
এই ঘটনায় নিহত সোহেল চৌধুরীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবি তদন্ত করে। সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থল থেকে আদনান নামে একজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। আদনানকে এজাহারে আসামি করা হয়।
১৯৯৯ সালে ৩০ জুলাই আদনানসহ ৯ জনকে আসামি করে ডিবি পুলিশ এই মামলার চার্জশিট দেয়। ২০০১ সালে ৩০ অক্টোবর মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
আদালতে অভিযোগ গঠনের দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর আসামি আদনান সিদ্দিকী মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। তখন মামলাটি তিন মাস স্থগিত ছিল। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফের মামলা স্থগিত করা হয়।
২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে এই মামলার স্থগিত আদেশ খারিজ করা হয়। এরপর মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় নিম্ন আদালতে শুরু হয়।
গত ২৮ মার্চ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।
আসামিরা কে কোথায়
মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, তারেক সাঈদ মাহমুদ কারাগারে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ব্যাংককে পলাতক, আদনান সিদ্দিকী মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে জামিন নিয়ে আমেরিকায় পলাতক, সেলিম খান পলাতক, বান্টি ইসলাম কানাডায় পলাতক, কিছুদিন আগে ফারুক আব্বাসি গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রযেছে। আশিষ রায় চৌধুরীকে র্যাব গ্রেফতার করেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন এই মামলার আসামি, সেও বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। পলাতক সবার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।