নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় অরক্ষিত খাল নালায় পড়ে প্রতি বছর ঘটছে প্রাণহানি। গত চার বছরে খাল–নালায় পড়ে মারা যান ৯ জন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে মারা যান দুইজন। অতীতে বিভিন্ন সময়ে খাল–নালায় প্রাণহানির জন্য চসিক ও সিডিএ’কে দায়ী করা হয়। এছাড়া নালায় পড়ে মৃত্যুর জন্য চসিক ও সিডিএ’র চরম অবহেলা দাবি করে সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিক প্রধান নির্বাহীসহ ১৩ জনকে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিল ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (সিসিবি ফাউন্ডেশন)
নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থার ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) শহরের আভ্যন্তরীণ খাল–নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত নেই। ফলে এ খাতে আলাদা কোনো বরাদ্দও নেই প্রকল্পে। তাই প্রকল্পগুলোর আওতায় খাল–নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ খুব বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে না।
অবশ্য ঝুঁকি আছে এমন অনেক জায়গায় স্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের আওতায় এ বেষ্টনী দেয়া হয়। কিছু কিছু জায়গায় চসিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব দিয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাাবি করেছেন নগরবাসী।
সিডিএ’র ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্প এবং ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
এছাড়া চসিকের রয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘নগরের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষ প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলছে। তিন সংস্থার এ চার প্রকল্পের কোনোটিতেই খালের পাড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে রেলিং দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ নালা–নর্দমা ও খালের একটি তালিকা করে চসিক। ওই তালিকা অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল–নালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। যেগুলো মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত। এ তালিকা প্রণয়নের পর ২ বছর সাত মাস পার হলেও এখনো অরক্ষিত রয়েছে শহরের খাল–নালা।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টিপাত ও বন্যা-অতিবর্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ বছর অধিক বৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে অরক্ষিত নালা ও খালগুলো অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এখন থেকে সতর্ক না হলে বর্ষায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।