সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাত মাসে আমাদের দেশে ১১৩ জন নারী নিজের স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্রটি কতটা ভয়ংকর এই একটি প্রতিবেদন থেকেই সেটা উপলব্ধি করা যায়। এছাড়াও দেশে নানাভাবে নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ বিষয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন সুপ্রভাতের প্রতিবেদক অনিন্দিতা সরকার প্রথা।
সুপ্রভাত: নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে বিবেচনা করেন?
অধ্যাপক মোজাম্মেল: নারীর প্রতি সহিংসতা শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতনকে বা যৌন সহিংসতাকে বোঝায় না। একজন নারীকে মানুষ হিসেবে তার যোগ্য মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করাটাও নির্যাতনের অংশ।
সুপ্রভাত: বর্তমান সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী বলে মনে করছেন ?
অধ্যাপক মোজাম্মেল: আমার কাছে মনে হয়, বহু আগে থেকেই নারীর প্রতি এক ধরনের বৈষম্য সমাজে বিদ্যমান। এটি আসলে মানবজাতির দুর্বলের ওপর সবলের নিপীড়ন করার প্রবৃত্তির পরিচায়ক ও প্রকাশ। নারীর নমনীয় ও মমতাময়ী বৈশিষ্ট্য মানবসভ্যতাকে সুন্দর করেছে, একে দুর্বলতা হিসেবে পরিগণিত করে নিপীড়নের জন্য সহজলভ্য ভাবার যে মানসিক সংকীর্ণতা, এটিই নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ।
সুপ্রভাত: শিক্ষকরা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেন?
অধ্যাপক মোজাম্মেল: আমি মনে করি, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বহু বড় বড় বক্তার থেকেও অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারেন সমাজের ওপর। কারণ, আমরা এমন একটি পেশার সাথে যুক্ত, যা আমাদেরকে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষাদান ও শিক্ষার্থীর চিন্তন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সুযোগ এনে দেয়। এই একই পেশার কারণে আমরা যখন কোনো বিষয়ে সমাজের উদ্দেশে কোনো মতামত প্রকাশ করি, তখন গুরুত্ব দিয়ে সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষই তা বিবেচনা করেন।
সুপ্রভাত: কীভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার হার কমানো যেতে পারে?
অধ্যাপক মোজাম্মেল: আমাদের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। এ ধরনের সহিংসতা রোধে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাটা অত্যন্ত জরুরি। সমঅধিকারে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি। আমার কাছে মনে হয়, প্রকৃতিগতভাবেই নারী যেহেতু পুরুষের তুলনায় শারীরিকভাবে একটু দুর্বল, নারীর পুরুষের তুলনায় একটু বেশি সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু আমরা সমাজে তার উল্টোটা দেখতে পাই। নারীর নমনীয়তাকে এখানে অক্ষমতা মনে করা হয়, তাকে প্রতিনিয়তি আমরা যখন বলি, ‘হিউমেন বিইং’ বা মানুষ, আমরা তখন কী বুঝি? মানুষ বলতে কি কোন আলাদা প্রাণি আছে? মানুষ তো পুরুষ বা নারী হয়। তাহলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা কেন দেখতে পাই যে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুরুষের মানবিক অধিকারগুলো রক্ষা পেলেও নারীর অধিকারগুলো রক্ষা পাচ্ছে না?
সুপ্রভাত: তরুণ সমাজের প্রতি আপনার বার্তা কী
অধ্যাপক মোজাম্মেল: একটি মানুষকে তার যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। একজন নারী তখনই ভালো মানুষ, যখন কোনোরকম বাহ্যিক চাপের কারণে সে তার নারীত্বকে না হারিয়ে বরং একটি সুষ্ঠু পরিবেশে নারী হিসেবে সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করতে পারবে। এবং একজন পুরুষ তখনই একজন ভালো মানুষ হবে, যখন যথাযথ মর্যাদার সাথে সে তার সর্বোচ্চ পৌরুষ অর্জন করবে।