নানা সমস্যায় কাটছেনা বিদ্যুৎ সংকট

আজ থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসতে পারে

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

চৈত্রের শেষ থেকেই গরমের মাত্রা বাড়লেও কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও কমেছে উৎপাদনের মাত্রা। চট্টগ্রামের সাতটি কেন্দ্রের ২৪টি প্লান্ট থেকে উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে ১৩টি। ফলে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলকে। কোথাও গ্যাসের সংকট, আবার কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সংকট কাটছে না।
গতকাল (রোববার) বিপিডিবির উৎপাদনভিত্তিক তথ্য থেকে দেখা যায়, ২৪টি প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ার কথা ২ হাজার ৫০১ দশমিক ১ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন ও সরবরাহ হয়েছে ৬৪৫ মেগাওয়াট। অথচ চট্টগ্রামের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ মেগাওয়াট। সরবরাহ ঠিক রাখতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে আমদানি করেছে ৪৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেই হিসেবে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে ২৬৩ মেগাওয়াট।
এ নিয়ে কথা বললে বিপিডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের সাতটি কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসভিত্তিক, দুইটি পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কম্বাইন্ড সাইকেল। এতে প্লান্ট রয়েছে ২৪টি। এসবের মধ্যে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কম থাকার কারণ হলো কাপ্তাই হ্রদে এখন পর্যাপ্ত পানি নেই। পানি পেলে উৎপাদন বাড়বে। তবে অন্যান্য প্লান্টগুলো থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে।
গতকাল বিপিডিবির উৎপাদনভিত্তিক তথ্য থেকে দেখা যায়, রাউজানে ২১০ মেগাওয়াটের দুইটি প্লান্ট থেকে ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন একদমই নেই। শিকলবাহায় ৫৫ মেগাওয়াটের জুদিয়াক থেকে ৫৪ মেগাওয়াট পাওয়া গেলেও ২২৫ মেগাওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াটের দুইটি প্লান্টে কোনো উৎপাদন নেই। এছাড়া ১০০ মেগাওয়াটের দোহাজারি থেকে ৭৯, ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটড থেকে ১৭, ৩০০ মেগাওয়াটের জুলদা থেকে ১৭৭, ২৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াটের আরপিসিএল থেকে ১২, ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা থেকে ১২, ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা-বারাকা থেকে ৮৫, ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী থেকে ৩৩, ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড থেকে ১৩০, ১১৬ মেগাওয়াটের এনলিমা থেকে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
কিন্তু রাউজান ও শিকলবাহা কেন্দ্র ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়া অন্য প্লান্টগুলো হচ্ছে- ১০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারী, ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক, ২০ মেগাওয়াটের টেকনাফ সোলার, ৭ দশমিক ৪ কাপ্তাই সোলার প্লান্ট। এছাড়া ৪৬ মেগাওয়াটের কাপ্তাই-১ প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৫ মেগাওয়াট। এছাড়া ৪৬ মেগাওয়াটের একটি ও ৫০ মেগাওয়াট করে তিনটি প্লান্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ উৎপাদন না থাকা প্রসঙ্গে কথা হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাউজান কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল মান্নান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘গত দুই দিন আগে (১৪ এপ্রিল) শিকলবাহা প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় তারা আমাদের (রাউজান কেন্দ্র) চালু করতে বলে। শিকলবাহা ও রাউজানের প্লান্ট চালাতে গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাসের সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় আমাদের রেশনিং করে চালাতে হয়। পরে হাটহাজারী প্লান্টে একটা এক্সিডেন্ট হওয়ায় আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে এখন আমরা একটি প্লান্ট চালু করেছি। অন্যটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ পড়ে আছে। এই মুহূর্তে চলমান প্লান্ট থেকে উৎপাদন হচ্ছে ১২০ মেগাওয়াট।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাউজান ও শিকলবাহা সেন্টার দুইটি চালু থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকবে। তবে দুইটি প্লান্টের বিদ্যুৎ যদি চালু করতে হয় তাহলে আমাদের পর্যাপ্ত গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস সরবরাহ তো ঠিকভাবে আসছে না। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদেরও স্বল্পতা রয়েছে। ফলে চাইলে তারা আমাদের গ্যাস দিতে পারছেন না।’
নগরজুড়ে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিপিডিবির চট্টগ্রাম বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কয়েকটি প্লান্টে কোনো উৎপাদন নেই যান্ত্রিক সমস্যার কারণে। এছাড়া প্লান্ট যেগুলো চালু আছে সেগুলোও কয়েকদিন ধরে সমস্যায় ছিলো। তাই আমাদের লোডশেডিং করে পাওয়ার এডজাস্ট করতে হয়েছে। আজ (রোববার) রাত থেকে বেশ কিছু প্লান্ট চালু হবে। এ নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করছি, সোমবার থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসবে।’