চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, নগরীতে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর অধিকাংশই এখন বেহাল। এসব এখন কার্যত চলাচলের অনুপযুক্ত। খানাখন্দে ভরা। ফলে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। কিছু বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় এসবে চলাচল করে ভারী যানবাহন। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় উঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ, সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। যাদের প্রতিদিন এই সড়কে যাতায়াত করতে হয়।
নগরের মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর থেকে চকবাজার অলি খাঁ মসজিদ মোড়, কাপাসগোলা সড়ক, হান্নান শাহ সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, আরাকান সড়ক, এম এম আলী সড়ক, সিডিএ অ্যাভিনিউ, অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক খানা-খন্দে ভরা।
একই অবস্থা শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের কাজীর দেউড়ি থেকে জামালখান, ফকির মোহাম্মদ সড়ক, কবির আহমদ, সওদাগর সড়ক, আকমল আলী সড়ক, প্রাণহরি দাশ সড়ক, শুলকবহর আবদুল হামিদ সড়ক, নূর আহমদ সড়ক, জুবিলী সড়ক, আমবাগান সড়কের।
বেহাল প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট মোড়, সিডিএ অ্যাভিনিউ, কে বি আমান আলী সড়ক, ইশান মহাজন সড়ক, পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত অংশে সড়কের। দক্ষিণ কাট্টলীর প্রাণহরি দাশ সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির পর আর ঢালাই করা হয়নি।
এসব সড়কে চলাচলরত চালকরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ছোট-বড় খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে। যার কারণে গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়েছে। প্রায়ই বিকল হচ্ছে গাড়ি। এছাড়া ছোট-বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির জন্য এ পরিমাণ সড়ক সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি আমরা। বৃষ্টি না থাকলে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সংস্কার কাজ শেষ করতে সপ্তাহখানেক লাগবে।’ তিনি আরো বলেন, ওয়াসার কাটাকাটির জন্য আরাকান সড়কটির অবস্থা খারাপ হয়েছে। এটিকে দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরীর প্রধান সড়কগুলো সংস্কারের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ প্রকল্পে আরাকান সড়ক সংস্কারের জন্য প্রায় পৌনে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ওয়াসার কাটাকাটির কারণে আরাকান সড়কের না হয় এই অবস্থা বুঝলাম অন্য সড়কের অবস্থা এত সঙ্গীন কেন? যদিও গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে ওয়াসা আইন মানছে না বলে দাবি করেন সিটি মেয়র। এভাবে চলতে থাকলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
আগে দেখতাম সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে রাস্তা সংস্কারের কাজ করত। আবর্জনা অপসারণ, মশকনিধন আর রাস্তা সংস্কার এ তিনটি কাজ নিয়মিত দৃশ্যমান ছিল। এখন সংস্কারের কথা বললেই বলে প্রকল্পের কথা । বানানো রাস্তা সংস্কারের জন্যও কি আলাদা করে প্রকল্প করতে হয়? আসলে সড়কগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে রয়েছে চরম গাফিলতি ও নিম্নমানের কাজ। কাজ চালাতে তড়িঘড়ি করে রাস্তা মেরামত করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। এক বৃষ্টিতেই আগের সব কাজ ধুয়ে-মুছে যায়। প্রতি বছর এসব সড়কের পেছনে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না। এই সংস্কৃতি থেকে সিটি করপোরেশনকে বেরিয়ে আসতে হবে।