নাকফুল

আরফান হাবিব »

আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না, বিয়ের কথাটা কীভাবে এমনভাবে সত্যি হয়ে উঠল। যেন আমি কানামাছি খেলায় অন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আর হঠাৎ করেই খেলার নিয়ম বদলে গেছে-আমি জানতেও পারিনি। বড় আপু বলেছিল, “তুই কিছু ভাবিস না, সব আমি দেখব।” আমি ভাবছিলাম, সত্যিই কি বিয়ে হয় এভাবে? মেয়েটির নাম অনুভা। নামটা শুনলেই মনে হয়, যেন ভেতরে একটা নদী বয়ে যায়। প্রথম দেখা হয়েছিল ভিড়ের মধ্যে, লোকজনের কোলাহল আর আতঙ্কে জড়সড় আমি। তবু তাকে দেখে মনে হয়েছিল, এই মেয়ে যদি বলে না, তবে পৃথিবীটা খুব স্বাভাবিকই থেকে যাবে, আর যদি বলে হ্যাঁ, তবে পৃথিবীটা আর আগের মতো থাকবে না। তবু আমি কিছুই বলিনি। বড় আপুই বলল, আবার যেতে হবে। আমি আবার গেলাম। হাতে একটা ছোট জুয়েলারি বাক্স। ভেতরে নাকফুল। আপু বলেছিল, “ওকে দিয়ে আসিস”। বাক্সটা আমি সরাসরি অনুভাকে দিইনি, দিয়েছিলাম ওর ছোট ভাইকে। ভেতরে গিয়ে সে যখন ফিরে এলো, বাক্সটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল-
-“অপু ফেতর দিয়েছে।”
আমি বাক্সটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। রাস্তার ওপর হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, কেউ আমার হাত থেকে কিছু নিয়ে নিয়েছে, অথচ সেটা চোখে দেখা যায় না। একটা শূন্যতা যেন সারা শরীর জুড়ে। হঠাৎই আমি বাক্সটা খুলে ফেললাম। ভেতরে কিছু নেই। শুধু একটা কাগজ। তাতে লেখা একটা নাম্বার। আমি তখনই ফোন করলাম। ওপাশে ওর গলা, যেন দূরের কোনো আলো। আমি বললাম-
“নাকফুলটা নেই”। ও হাসল, চলমান সে হাসি…. সেই হাসি ছিল অবিশ্বাস্য নীরবতার মতো, যেটা শুনলে চারপাশের সব শব্দ থেমে যায়। আমি আর কিছু বললাম না। শুধু ভাবছিলাম, কোথায় থাকে নাকফুল? কপালে, নাকে, না-কি কারও হৃদয়ের গভীরে? আর আমার মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো খেলাটা থেকে বাদ পড়িনি। বরং খেলা আস্তে আস্তে আমাকে ঘিরে ফেলছে।
তারপর ও বলল- “নাকফুলটা যেখানে থাকার, সেখানেই আছে”।