প্রেস ক্লাবে নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম
প্রতিষ্ঠানের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন যেনো ব্যক্তির সমালোচনা মনে না করেন : নওফেল
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি পুরাতন ধারাকে পরিবর্তন করে নতুন ধারার সূচনা করতে চাই। আর তা করতে গিয়ে শুধু সমালোচনামূলক নিউজ করলেই হবে না, সমাধানও দেখিয়ে দিতে হবে। একইসাথে কোথাও ভুল হলে দেখিয়ে দেবেন। নগরবাসী বিভ্রান্ত হয় এমন নিউজ থেকে বিরত থাকবেন।’
গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী আরও বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। সেই প্রত্যাশা আমাকে পূরণ করতে হবে। তা করে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে চাই। এজন্য তিনি বিভিন্ন সংস্থার কাজে সমন্বয়ের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সমন্বয় সভায় সংস্থাগুলোর প্রধানগণ আসার কথা। কিন্তু তারা না এসে জুনিয়র কাউকে পাঠান এবং তা মনিটরিং করেন না। এতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। এজন্য যারা সভায় আসবে না কিংবা পরবর্তীতে মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে না তা নিয়ে মেয়রের হাতে কর্তৃৃত্ব থাকতে হবে।
এ শহরকে নিয়ে অনেক চিন্তা রয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন আনা হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে। একইসাথে শহরের ভাসমান মানুষদের চিকিৎসার জন্য একটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করতে চাই। এতে একটি গাড়ি পুরো নগরীতে ঘুরে ঘুরে মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেবে।
সন্ত্রাস ও মাদকের সাথে কখনো আপস করবো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি অন্যায়ের কাছে অতীতেও মাথা নত করিনি, এখনো করবো না। এই শহরে মাদক ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, শহরের মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে, শিশুদের খেলাধুলার জন্য মাঠ নিশ্চিত করা হবে।
এই শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ব্যবহার করে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে কেটে বিনাশ করা হয়েছে। পাহাড়, নদী ও সাগরবেষ্টিত এই শহরের অপার পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে এ শহরকে গড়ে তুলতে হবে। আর সেজন্য প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সমাজের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া হবে।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামীতে নতুন খাল খনন প্রকল্প ছাড়াও খালের উভয় পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
চট্টগ্রামকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, আমি পাঁচ বছরে শেষ করতে না পারি, অন্তত সূচনা করে দিয়ে যেতে চাই। আর অনেক কিছুই পরিকল্পনায় থাকবে, কিন্তু সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারবো তা নিশ্চিত নই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস।
মতবিনিময়ে মিডিয়া সম্পর্কে নতুন মেয়রের প্রতি পরামর্শমূলক বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, নতুন মেয়রকে মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠানের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন যেনো ব্যক্তির সমালোচনা মনে না করেন। সাংবাদিকরা যতো বেশি সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশন করবেন, প্রতিষ্ঠানে ততো বেশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। সমালোচনা না করা হলে প্রতিষ্ঠান নির্জীব হয়ে পড়বে। তাই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সমালোচনাকে পজিটিভ আকারে নিতে হবে।
রেজাউল করিমকে উদ্দেশ করে নওফেল আরও বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। সেটা হতে হবে পজিটিভ দিক। একইসাথে আপনি মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের পাশে পাবেন চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। আপনার কাছে নগরবাসী ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করে।
প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, সিনিয়র সহসভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।