নিজস্ব প্রতিবেদক »
কোথাও শোভা পাচ্ছে নিত্য নতুন ফুলের গাছ, কোথাও রঙ বেরঙের ঐতিহাসিক উক্তি, কোথাও চলছে জোর মাইকিং। নগরীর প্রধান সড়কগুলো সাজছে রঙিন সাজে। নেতা-কর্মীদের নানান আকারের শুভেচ্ছা ব্যানার ও ফ্যাস্টুনে ভরে গেছে নগর। ইতিপূর্বে নগরের এমন দৃশ্য না দেখায় নগরবাসী চান, প্রধানমন্ত্রী যেন নিয়মিত চট্টগ্রামে আসেন।
নগরের টাইগার পাস এলাকা থেকে তৌহিদুল ইসলাম নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেন, ‘সবখানে সাজ সাজ রব দেখে খুবই আনন্দ হচ্ছে। সচরাচর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। আমরা চাই কেবল নেতা-মন্ত্রীদের আগমন উপলক্ষে নয়। সবসময় এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রঙে রঙিন থাকুক প্রাকৃতিক সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম নগরী। সারাবছরই দূষণমুক্ত নগরীতে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যদি নিয়মিত চট্টগ্রামে আসতেন, তাহলে খুব ভালো হতো।
নগরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, ধুয়ে মুছে ঘষা-মাজা করে পরিষ্কার করে করা হচ্ছে নগর। নগরের ময়লা-আবর্জনা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিক্ষুকদের উপস্থিতিও কমে গেছে বিমানবন্দর, টাইগারপাস ও পলোগ্রাউন্ড এলাকায়। রঙিন করা হচ্ছে নগরীর সড়কগুলো, ফুটপাত ও মিটলাইন বর্ডারগুলো। নগরীর টাইগারপাসের সিম্বলিক বাঘের স্থাপত্যে নতুন রঙ করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে কে কার চেয়ে বড় শুভেচ্ছা ব্যানার টাঙিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন। নগরের কাজির দেউড়ি, টাইগার পাস, লালখান বাজার, বহদ্দারহাট, বিমানবন্দর এলাকা, মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, নিউমার্কেট, কাস্টমস, ইপিজেড মোড় ও পলোগ্রাউন্ড এলাকায় বসানো হয়েছে শুভেচ্ছা তোরণ।
এছাড়া নগরীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার থেকে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের মধ্যখানের অংশটির ল্যাম্পপোস্টের নিচে বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরে নৌকার আকৃতিতে এলইডি লাইটিং করেছে চসিক। এছাড়া ফুটপাত বর্ডার ও মিটলাইন বর্ডারগুলোতে চসিকের সৌজন্যে টাঙানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও বাণী সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন ব্যানার। নগরীর ২৪টি স্পটে মাইকিং চলছে মহাসমাবেশের থিম সং ও যোগদানের আহ্বান। অলিতে গলিতে মাইকিং করে চালানো হচ্ছে জোর প্রচারণা।
জনসভাস্থল ও মঞ্চ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সমাবেশের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে নৌকার আদলে। নৌকাকৃতির মঞ্চটি ৭ ফুট উচ্চতার ও ১৬০ ফুট দীর্ঘ। মঞ্চটির মাঝখানের ৪০-৮০ ফুটের মধ্যে একই সাথে ২০০ জন অতিথি অবস্থান করতে পারবেন। মঞ্চের সামনে মুক্তিযোদ্ধা, ভিআইপি ও মহিলাদের বসার জন্য পৃথক প্যান্ডেল করা হচ্ছে। মঞ্চের আশপাশের এলাকার জন্য লাগানো হচ্ছে প্রায় ৩ শতাধিক মাইক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার, স্থাপন করা হয়েছে ২টি মেডিক্যাল সেবাজোন, একটি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ জোন।
জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সার্বিক তদারকিতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা মঞ্চ তৈরিসহ প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনের সার্বিক প্রস্তুতি কাজ দেখভাল করছেন।
জনসভা প্রসঙ্গে কথা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যশোরের জনসভার দ্বিগুণ মানুষের জমায়েত করবো। এ জমায়েতের জন্য থানা ও ইউনিট পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। সমাবেশকে সফল করতে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো একযোগে কাজ করছে। সভায় ব্যাপক জনসমাগম হবে। তাই আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার সাথে কাজ করছি।’
সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবকিছু তদারকি করছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স ( এসএসএফ)।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘আমরা যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সমাবেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের ৭ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর প্রধান সড়কের কিছু নিরাপত্তার স্বার্থে ব্লক রাখা হবে। সভাস্থলেও পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকবে। সভাস্থলের আশেপাশে থাকা ভ্রাম্যমাণ বসতিগুলোকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’