হুমাইরা তাজরিন »
বাঙালির খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের যেমন কমতি নেই তেমনি কোন খাবারকে কিভাবে খেলে সেটি উদরের সাথে সাথে মনও ভরাবে তা বাঙালির চেয়ে আর বেশি কেউ জানে না। নানান পদের খাবার রান্না হতে শুরু করে ভর্তা, চাটনি এবং আচার সবই আমরা মুখরোচক করে তুলি। তেমনি গ্রাম বাংলার রয়েছে বেল সদৃশ কতবেল নামক ভিন্ন স্বাদের সুগন্ধি একটি ফল যাকে সুস্বাদু চাট্নি বা আচার বানিয়ে খাওয়া হয়। নগরের অলিতে গলিতে দেখা মিলছে পুষ্টিগুণে ভরা এই ফলটির।
এ সুপ্রভাত প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একটি কতবেল খাওয়া শেষ করেন ইসরাত জাহান ইলমা। তিনি বলেন, ‘এগুলো আগে আমি কেবল আমার বিশ্ববিদ্যালয় (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ক্যাম্পাসে পেতাম। ওরা বেশ মজা করে এটির চাট্নি তৈরি করতো। এখন দেখছি শহরের অনেক জায়গায় ভ্যানে করে বিক্রি করছে। তবে দাম একই রয়েছে। লবণ-মরিচ গুঁড়া, শুকনো মরিচ, কাসুন্দি এবং আচার মেখে চাট্নি বানিয়ে দিলে এটি খেতে বেশ মজা লাগে। আমার মা এটি বেশি পছন্দ করেন। তিনি বলেন এটি কেবল সুস্বাদু তা না এটা বেশ পুষ্টিকরও।’
কতবেল বিক্রেতা মোহাম্মদ নাাসিম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমি সকাল ১০টা থেকে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেড়শ’ থেকে ২শ’ টা কতবেল বিক্রি করি। সাইজ অনুযায়ী ৩০ টাকা, ৪০ টাকা এবং ৫০ টাকা দামে প্রতি পিস বিক্রি করি। এগুলো আসছে নোয়াখালী থেকে। আমরা নিছি চট্টগ্রাম ফলমণ্ডি থেকে। যারা চিনে এই ফলটাকে তারা অবশ্যই খায়। আর যারা চিনে না তারা বুঝতে পারে না। তবে আগে ঢাকার দিকের মানুষ এটা বেশি খাইতো। এখন ফলন ভালো হওয়াতে এখানেও সবাই খাচ্ছে।’
বেলজাতীয় অম্ল ফল কতবেল। যার বৈজ্ঞানিক নাম লিমোনিয়া এসিডিসিয়া। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম কপিত্থ। দেখতে বেলের মতো শক্ত খোলসযুক্ত হওয়ায় বাংলায় এর নাম কতবেল। এই ফলের গাছটির আদি নিবাস ভারত (আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ), বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। খসখসে খোলসের এই ফলটির গাছ এবং পাতা অনেকটা কামিনী ফুলের গাছের মতো। গাছগুলো ৯ মিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের ছোট ছোট কাঁটা পাতাগুলো পিষলে লেবুর মতো সুগন্ধ বের হয়। কামিনী ফুলের রঙের মতো এর ফুলও হয় সাদা রঙের। প্রতিটি ফুলে থাকে ৫টি পাপড়ি। প্রতিটি পাতা ২৫ থেকে ৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১০ থেকে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়। সাধারণত কতবেল ৫ থেকে ৯ সেন্টিমিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। ফলের বাইরের আবরণ সবুজাভ বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এটি কাঁচা অবস্থায় হালকা কষযুক্ত এবং টক হয় আবার পরিপক্ব হলে এটি হয় মিষ্টি স্বাদের। আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কতবেল পাকে।
ফলটির বৃত্তান্ত ঘেঁটে জানা যায়, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটির প্রতি ১০০ গ্রাম (৩৫ আউন্স) এ আছে : শক্তি ৫১৮ দশমিক ৮১৬ কিলোজুল বা ১২৮ ক্যালরি। শর্করা ১৮ দশমিক ১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৫ গ্রাম, ¯েœহ পদার্থ ৩ দশমিক ৭ গ্রাম, প্রোটিন ৭ দশমিক ১গ্রাম। থায়ামিন (বি১) শূন্য দশমিক শূন্য ৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন (বি২) ১৭ মিলিগ্রাম, নায়াসিন (বি৩) ৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ৬ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ১৮ মিলিগ্রাম, জিংক ১০ মিলিগ্রাম এবং পানি ৬৪. ২ গ্রাম।
তাই ফলটি রক্ত পরিষ্কার করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তস্বল্পতা দূর করে। যকৃত এবং হৎপি- ভালো রাখে। কোলোস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ করে। কতবেল থায়ানিন অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করে। বদহজম দূর করে। দীর্ঘদিনের অমাশয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে কতবেল বেশ উপকারি। কলেরা এবং পাইলসের সমস্যায় দূর করতে এটি সহায়ক। পেপটিক আলসার থেকে রক্ষা করে। আলসারের ক্ষত সারাতে এটি সহায়তা করে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ¯œায়ুর শক্তি বাড়ায়। সর্দি-কাঁশিতে কতবেলের জুড়ি মেলা ভার।