নিজস্ব প্রতিবেদক »
কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চতুর্থ দিনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল পৌনে পাঁচটায় নগরের টাইগারপাস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় এলে সেখানেও পুলিশ ধাওয়া দেয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় তারা আশেপাশের গলিতে ঢুকে যায়। দৌড়াতে গিয়ে একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাফি পড়ে গিয়ে আহত হন। পরবর্তীতে রাফিসহ আন্দোলনকারীরা আবারও পুলিশের মুখোমুখি হয়। বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেটেই রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত অবস্থান করেন। পুলিশও তাদের ঘিরে অবস্থান নেয়। এইসময় ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচল করলেও নিচে জিইসি থেকে মুরাদপুর রাত আটটা পর্যন্ত সব যানবাহন আটকা পড়েছিল।
এর আগে বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের (বটতলী) ৫ নম্বর লাইনটি অবরোধ করেন। এ লাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী মহানগর গোধূলি দাঁড়ানো ছিল। শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে দাঁড়ানোর দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়।
পুলিশের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কর্মসূচি ছিল সাড়ে তিনটায়, আপনারা সাড়ে তিনটায় শুরু করেন। আর রেলস্টেশন কেপিআইভুক্ত জায়গা। এখানে অবস্থান না নিয়ে দেওয়ানহাট অথবা কদমতলী অবস্থান নিন।’
পুলিশের এসব কথার পরই শিক্ষার্থীরা রেললাইন ছেড়ে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পুরোনো রেলস্টেশনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা পুরোনো রেলস্টেশনের ফটক দিয়ে বাইরে আসার পরই রেলওয়ে কর্মকর্তারা ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে পুরোনো স্টেশনের সামনে এসে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর একটি মিছিল নিয়ে পুরোনো স্টেশন থেকে কদমতলী হয়ে টাইগারপাস এলাকায় আসেন। টাইগারপাস এলাকায়ও আগে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে বিকেল ৪টা ২০ থেকে ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি চলে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে রওনা হন।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী একজন শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। পুলিশ দুই দফায় আমাদের উপর হামলা করে। টাইগার পাস মোড়ে আমার বোনদের উপরও হামলা করা হয়। দুই নাম্বার গেইটে লাঠিচার্জ করা হয়। এসময় পুলিশের সাথে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। তারা যদি ভেবে থাকে হামলা মামলা করে আমাদেরকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে তাহলে তারা ভুল করছে। ছাত্রসমাজ কে দাবিয়ে রাখা যায় না, যাবে না।
চবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করে আমাদের তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। আজকে থেকে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা টাইগারপাস এলাকা ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করি। পরে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে চলে যায়। তবে পুলিশের দিক থেকে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় জানান তিনি।