নগরায়নের ফলে বাড়বে পরিবেশ ঝুঁকি

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং পরিবেশের সংকট মোকাবেলায় অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক ‘‌নগর জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সের গবেষক আশরাফ দেওয়ান। উপস্থাপনায় তিনি দাবি করেন, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বাস করে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ তাদের গবেষণায় বলেছে,

বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নগরায়ণ। বিশ্বের ৮০০ কোটি জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ বসবাস করে শহর এলাকায়, যা ২০২৫ সালে ৭০ শতাংশে পৌঁছবে। উন্নত জীবন, কর্মসংস্থানের সুযোগসহ নানা কারণে নগরে বাড়ছে জনসংখ্যা। তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে শহরে বাড়ছে দুর্যোগের ঝুঁকি। জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ, পরিবহন ও কারখানার আধিক্যে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও। দেশের বড় বড় শহরের মতো ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে চলছে যা বন্যা, জলাবদ্ধতার মতো বড় ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৫০ সালে শহরে বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল মোট সংখ্যার ৩০ শতাংশ। ২০০০ সালে ৪৭ শতাংশ, বর্তমানে (২০২৫ সালে) বিশ্বের শহরাঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। ২০৫০ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ শতাংশে। নগরায়ণের ফলে শহরে ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে আর ৭৫ শতাংশ এনার্জি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বন্যার মতো দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং নগরায়ণের ফলে বয়স্ক এবং নিম্ন আর্থসামাজিক গোষ্ঠীর ঝুঁকি বাড়ছে, যার ফলে শহরগুলোয় মৃত্যুর হার বেশি।

শহর যেমন বড় হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে, নগরায়ণের নানামুখী সুযোগ-সুবিধার জন্য মানুষ ঢাকায় আসছে। ২০২৯ সালে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো নগরের জনসংখ্যা হবে ৮১ দশমিক ৪ মিলিয়ন, মানে বাংলাদেশ হবে অন্যতম নগররাষ্ট্র। আর জনসংখ্যা বাড়লে বাড়বে পরিবহন ও কলকারখানা যা উষ্ণতা বাড়াবে স্বাভাবিকভাবে। ঢাকায় উষ্ণতা বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ভবন নির্মাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সংখ্যা বাড়ছে যা প্রচুর পরিমাণে বাতাস সংরক্ষণ করে ফেলছে আর বাইরে ছাড়ছে দূষিত বায়ু। যার কারণে এখন সহসাই গরম কমে না। বিদেশী বড় শহরের মতো ঢাকার পরিবহন বা ভবনগুলো জলবায়ু সহনশীল করে গড়ে তোলা হয় না। যার কারণে সামগ্রিকভাবে তাপ বেড়ে যায়, যা কমার সুযোগ পায় না।

নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর প্রভাব উদ্বেগজনক বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী। তার মতে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‌আমরা সবাই সুন্দর, স্থিতিস্থাপক, টেকসই শহর চাই। কিন্তু কীভাবে? বর্তমানে নগরের যে জনসংখ্যা, ২০৩০ সালে সেটি ৩০ শতাংশে পৌঁছবে। নগর জনসংখ্যার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি আবার পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখান থেকে মুক্তির একটাই পথ সেটি হচ্ছে সমন্বিত ও সামগ্রিক পরিকল্পনা নেয়া।’ অধিক জনসংখ্যা, বায়ুদূষণ, তাপপ্রবাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নগরে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জলবদ্ধতা সৃষ্টি ও বন্যার মতো দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা ।