নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি »
ফটিকছড়ি উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলো সাবাড় করে দিচ্ছে কৃষি জমির টপ-সয়েল, অনাবাদি জমি ও পাহাড়ি মাটি। পালাক্রমে প্রতিদিন রাতেই ছোট বড় এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে ইটভাটায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মকে ঘিরে পুরো ফটিকছড়িতে গড়ে উঠেছে বেশকিছু অবৈধ সিন্ডিকেট। অবৈধ বালু উত্তোলন, মাটি কাটা, সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে সবাই যেন একজোট। মাটি কেটে এভাবে ইটভাটা পরিচালনা এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
হালদার তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটার প্রধান জ্বালানি হচ্ছে কাঠ। এসব ইটভাটার জ্বালানির জন্য অনেক বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। ফলে প্রানিদের নিরাপদ আবাসস্থল বিলুপ্ত ও পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন হালদা গবেষক ও পরিবেশবিদ ড. শফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নে ২২টি ইটভাটা চালু রয়েছে। ভাটাগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট মাটি কেটে পুরো ইউনিয়নকে বিরানভূমিতে পরিনত করেছে।
নাজিরহাট পৌরসভায় ৮টি ইটভাটা মন্দাকিনী গ্রামকে নরকে পরিনত করেছে রাতের অন্ধকারে। এছাড়া হারুয়ালছড়িতে রয়েছে ২টি, ভূজপুরে ৩টি, নারায়নহাটে ৩টি, দাঁতমারায় ১টি, সুয়াবিলে ১ টিসহ খিরাম, ধর্মপুরে বেশ কয়েকটি অবৈধ সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটগুলো মাটি কাটার পাশাপাশি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দক্ষিণ ফটিকছড়ির সর্তা খালে খিরাম যুবলীগ নেতার ১টি, ধর্মপুরে আঁধারমানিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ ৩টি সিন্ডিকেটের ৩ টি, সমিতিরহাটের আরবানিয়া চৌধুরী হাট ও দক্ষিণ নিচিন্তপুরে ২টি, সুয়াবিলের ভাঙ্গা দিঘীর পাড়, বারোমাসিয়া, পাঠিয়ালছড়িতে ৩টি, হারুয়ালছড়ির মহানগর ও সাতঘর পাড়ায় ২টি, সুন্দরপুরের আজিম চৌধুরী ঘাটে ১টি, পাইন্দং এর ফকিরাচানে ১টি, পাইন্দং এর ফকিরাচানে ১টি ও বেড়াজালী চাম্পুপাড়া এলাকার ১টি, কাঞ্চননগরে চেঙ্গেরকুলে ১টি, নারায়নহাটের কুলাল পাড়া ও ধামারখিলে বেশ কয়েকটি অবৈধ বালু মহাল রয়েছে।
এর মধ্যে সুয়াবিল ইউপির চৌমুহনী এলাকার পূর্ব পাশে চরের মাটি ও পাইন্দং ফকিরাচানের পূর্ব পাশে হালদার পাড় কেটে নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অবৈধ বালু মহাল ও মাটি কাটার দায়ে একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকবার মাটি কাটার যন্ত্র ভেকো মেশিন, ডাম ট্রাক জব্দ করে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের মোটা অংকের জরিমানা ও অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ও করা হয়েছে।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যার ফলে এসব বালু ও মাটি খেকোদের থামানো যাচ্ছে না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন অমান্য করে এস্কেভেটর কিংবা শাবল-কোদাল দিয়ে দিনরাত্রি চলছে ফসলি জমির মাটি, পাহাড় ও হালদা নদীর পাড় কাটার মহোৎসব। এর ফলে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে পথচারীরা। বালু খেকো ও মাটি বেপারীদের বেপরোয়া কর্মকা-ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ এই ধরনের গর্হিত কাজ করতে পারেনা। যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান স্বপন বলেন, যুবলীগ নেতাকর্মীরা পদপদবী ব্যবহার করে অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পরার নজির নেই। সুনির্দিষ্ট প্রমান যদি কেউ দিয়ে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরি বলেন, অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলনে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাব্বির রাহমান সানি মাটি কাটার ব্যাপারে অনেকবেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জেল, জরিমানা করার কথা উল্লেখ করে বলেন, মাটি কাটা থামছেইনা। এর অন্যতম কারণ ইটভাটা। ইটের বিকল্প কংক্রিটের ব্লকের কারখানা যদি এখানে স্থাপন করা যায় তাহলে মাটি কাটার পরিমাণ কমে আসতে পারে। মাটি কাটার ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।