সুপ্রভাত ডেস্ক »
পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে নৃগোষ্ঠীর নারী ও শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুই জেলা শহরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় তারা আট দফা দাবিনামাও তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, খাগড়াছড়ির রামগড়, রাঙামাটি সদর, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার না হাওয়ায় দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। পাহাড়ের নারীরা এখনো নিরাপদ না। দ্রুত সব ঘটনার বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া তাদের দাবি করা আট দফার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিসহ সব গ্রেডের চাকরিতে ৫ শতাংশ ‘আদিবাসী’ কোটা পুনর্বহাল করতে হবে; ‘আদিবাসীদের’ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসীদের’ সঠিক ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দলীয়, সৎ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা এবং গত ২০ বছরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দুর্নীতি তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
অবিলম্বে পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং ১৯০০ রেগুলেশন বহাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি পূর্বক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং জেলা পরিষদের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা ও মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে ক্রীড়া খাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান এবং প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মানবণ্টনে মাতৃভাষা পারদর্শিতা যাচাই করার জন্য একটি অংশ যুক্ত করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকারি বা বেসরকারি কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর ‘পানিশমেন্ট জোন’ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং চাকরির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয়দের পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সকালে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ফটকে গিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বিকাশ চাকমা, কিকো দেওয়ান, শিপন চাকমা, উকাচিং মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী রোকন চাকমা, সংস্কৃতি কর্মী বিজ্ঞান্তর দেওয়ান।
বক্তারা বলেন, পাহাড়ে বারবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় পাহাড়ি নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে।
পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এলাকায় স্থায়ী শান্তি পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
এদিকে সকালে খাগড়াছড়ি গেইট থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেয়।
পরে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মুক্তা ধর ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও ভিকটিমকে সহায়তায় আশ্বাস দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফিরে আসেন।
তারা শহরের চেঙ্গী স্কোয়ারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন হিতার্থ চাকমা, সুকন চাকমা, তোশিতা চাকমা।
বক্তারা, প্রশাসনকে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দেন। এই সময়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২২ অগাস্ট রামগড়ের পাতাছড়ায় এক পাহাড়ি নারী গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ২৫ অগাস্ট নির্যাতিতা নারী বাদি হয়ে মামলা করেন। কিন্তু এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।