দেশে ডলারের দাম বেড়ে এখন ১২৯ টাকা

সুপ্রভাত ডেস্ক রিপোর্ট »

দেশে আবারও বেড়েই চলেছে মার্কিন ডলারের দাম। ব্যাংকের পাশাপাশি কার্ব মার্কেটেও ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। গতকাল এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোয় প্রতি ডলার ১২৯ টাকায়ও কেনাবেচা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের মধ্যে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনছে। এতে অবশ্য আগের চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসছে।

ব্যাংকগুলো বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতে ডলারের দাম বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। দুটো মিলিয়ে ডলারের বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

রমজানে নিত্যপণ্যের এলসির পাশাপাশি পুরোনো এলসির কারণে মুদ্রাবাজার চাপে আছে। রিজার্ভ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার প্রক্রিয়া ও কয়েকটি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসও ডলারের দাম বাড়ার পেছনে দায়ী। কয়েকটি ব্যাংক সরকারি দামের তুলনায় বেশি দামে ডলার কেনায় চলতি মাসে মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে, ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু আছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা করতে পারে।

ক্রলিং পেগ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না।

রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দেওয়ার অনুমতি থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১২৮ টাকা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এসব ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে না হলে ব্যাংকগুলোকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে।

চলতি মাসে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। রফতানি আয়ও প্রবৃদ্ধির ধারায়। এর পরও দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পাশাপাশি কার্ব মার্কেটেও (খুচরা বাজার) ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। গতকাল এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোয় প্রতি ডলার ১২৯ টাকায়ও কেনাবেচা হয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তরা বলছেন,অস্থিতিশীলতার জন্য যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী। বকেয়া এলসির দায় পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশের ফলে কয়েকটি ব্যাংক ডলার কিনতে বেশি দাম দিচ্ছে। এই মাসে বেশ কয়েকটি বড় এলসিও খোলা হয়েছে।

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ আছে। কারণগুলো হলো—দুর্বল ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি বন্ধ ও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে মুদ্রাবাজারে চাপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলার ও ডলারের বিনিময় হার আরও নমনীয় হতে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিদিনের দামের ভিত্তিতে ডলারের জন্য রেফারেন্স রেট প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য রেফারেন্স রেটকে ডলার কেনাবেচার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা।