দেশে ক্যানসার শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে

সরকারি অর্থায়নে সারা দেশে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, দেশে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী আছেন তিন কোটি। এঁদের প্রত্যেকের জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হয়েছে ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭ জনের। এর অর্থ ওই বয়সী প্রায় ৮০ শতাংশ নারী জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষার বাইরে আছেন। এ পর্যস্ত পরীক্ষা হওয়া ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ নারীর শরীরে ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বা ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।
দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ নারী এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষার বাইরে আছেন। নতুন গবেষণা বলছে, জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী সব ধরনের ভাইরাসকে মাথায় রেখেই টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে একাধিক উপস্থাপনায় বলা হয় নারীদের মধ্যে বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। এর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। ক্যানসারবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকনের ২০২০ সালের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বলা হয়, ৬৮ হাজার ৭০০ নারী ক্যানসার রোগীর মধ্যে ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে, ১২ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারে, ১১ দশমিক ১ শতাংশ খাদ্যনালির ক্যানসারে, ৭ দশমিক ৮ শতাংশ পিত্তাশয়ের ক্যানসারে, ৬ দশমিক ৭ শতাংশমুখ ও ঠোঁটের ক্যানসারে এবং ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ নারী আরও কয়েক ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত।
জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় মূলত ভাইরাস থেকে। এটি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি নামে পরিচিত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ রকম ভাইরাস আছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে এইচপিভি১৬ এবং এইচপিভি১৮ নামের ভাইরাস ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের কারণ। বাকি ১২টি ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। টিকাও দেওয়া হয় এইচপিভি১৬ ও এইচপিভি১৮ এর জন্য। কিন্তু দেশে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য ভাইরাসগুলোর কারণে জরায়ুমুখ ক্যানসার বেশি হচ্ছে।
৩ হাজার ৮৫৬ জন নারীর ওপর এইচপিভি-ডিএনএ টেস্ট নিয়ে নতুন গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোলজিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিরিন আক্তার বেগম। তিনি জানান, এই পরীক্ষাটি ব্যয়বহুল। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়।
দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ নারীর পক্ষে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ করা দুঃসাধ্য তা স্বীকার করতে হবে। তাই সরকারি খরচে প্রত্যেক বয়স্ক নারীকে যেন ক্যানসারের পরীক্ষা ও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।