সুপ্রভাত ডেস্ক
দীর্ঘদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত আড়াই মাসে বিশ্ববাজারে প্রতিমণ সয়াবিন ও পাম অয়েলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু দেশিয় বাজারে দাম না কমে উল্টো গত দুই সপ্তাহে প্রতিমণ সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।
এমনকি, বর্তমানে দেশিয় বাজারে যে দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে, তা ক্রয়মূল্যের চেয়ে প্রতিমণ ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি।
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশিয় বাজারে দাম বাড়াতে তৎপর হন আমদানিকারকরা। কিন্তু বুকিং দর কমলে দাম কমানোর ক্ষেত্রে সেই তৎপরতা দেখা যায় না আমদানিকারক ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে। ফলে দুই-আড়াই মাস ধরে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশিয় বাজারে এখনো ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দাম। খবর টিবিএস।
ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, করোনা ও তৎপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহে চেইনে বিঘœ হওয়ায় আড়াই বছর ধরে অস্থির ভোগ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার। এরমধ্যে গত দুই বছর টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ভোজ্যতেলের দাম। তবে উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় গেল ছয় মাস আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলেও ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে সেই সুবিধা পাননি দেশের ভোক্তারা।
ইনভেস্টিং ডট কমের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) পর্যন্ত প্রতিটন অপরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ৯২০ডলার। বছরের শুরুতে অর্থাৎ, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ৯৬৭ ডলার।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৪৮১ডলার, যা জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ১ হাজার ৫৪০, এমনকি ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ১ হাজার ৫৪৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
অর্থাৎ, গত আড়াই মাসে বিশ্ববাজারে প্রতিটন পাম অয়েলের দাম ৪৭ ডলার ও সয়াবিনে ৬৭ ডলার কমেছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের ধারাবাহিকভাবে দাম কমলেও এর কোনো প্রভাব নেই দেশিয় বাজারে। বরং রমজানকে ঘিরে দেশিয় বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দাম।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকায় ও সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টাকা দামে। অথচ দুই সপ্তাহ আগে, খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ পাম অয়েল ৪ হাজার ৭০০ টাকা ও ৬ হাজার ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও মেসার্স আমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমান উল্লাহসহ আরো অনেক ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে গত ছয়মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে মণপ্রতি ১,০০০ টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা। এখন আগেরে চেয়ে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। সেইসঙ্গে কমেছে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং দরও। কিন্তু দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশিয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দীর্ঘদিনেও দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম কমে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালিক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলেও ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে বর্তমানে যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কমপক্ষে তিন মাস আগে বুকিং করা পণ্য।’
‘ফলে বর্তমানে বাজারে থাকা পণ্যে দাম কমানোর সুযোগ নেই। কম দামে বুকিং করা পণ্য বাজারে পৌঁছলে ঠিকই তেলের দাম কমে যাবে। কারণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বিক্রি করার সুযোগ নেই,’ যোগ করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, সর্বশেষ গত তিন মাসে (২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর-ফেব্রুযারি) দেশে এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ও দুই লাখ ৭০ হাজার টন পাম অয়েল আমদানি হয়েছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন সয়াবিন ও ২ লাখ ৭৭ হাজার টন পাম অয়েল আমদানি হয়েছিল।