আশঙ্কাটাই সত্য হলো ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে একটানা ভারি বর্ষণ, তার সঙ্গে জোয়ারের পানি মিলে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা। রোববার রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় চট্টগ্রামে, যা অব্যাহত ছিল সোমবার রাতেও। ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি উঠতে শুরু করে। ফলে পথে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বিভিন্ন সড়ক গোড়ালি থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে। রাতে যখন রেমাল উপকূল অতিক্রম করছিল তখন ভাটা ছিল। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মধ্যরাতে নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর সকাল থেকে নগরীর প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, ডিসি রোড, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। এরমধ্যে নগরীর প্রবর্তক মোড়ের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি করুণ। এই সড়কে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা চলছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচলা করছেন পথচারীরা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে এক শিশু ও এক নারীসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের ছয় জেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯টি জেলা, যার মধ্যে আছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। রেমালে মোট ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা আগের তুলনায় অনেক বেশি। অনেক এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা আছে। মাছের ঘের, গাছপালা নষ্ট হয়েছে।’
ধারণা করা হয়েছিল রেমালে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকেও তাই বলা হচ্ছে। অবশ্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কয়েকদিন পর বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে এরই মধ্যে দুর্গত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারি সহায়তা নয় বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আশ্রয়শিবির ও জলবন্দি মানুষদের কাছে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে।