মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলির সাথে একতরফা সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে ইসরায়েল গত মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান না করে এ ধরণের চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সহায়ক নয় বলে রাশিয়া উল্লেখ করেছে। এদিকে ফিলিস্তিনে এই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরের দিনই ফিলিস্তিন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামনের নির্বাচনে ট্রাম্প যে বেকায়দায় আছেন তা থেকে অবস্থান ভাল করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রি করার উদ্দেশ্যই এই চুক্তি স্বাক্ষরের নেপথ্যে রয়েছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলকে নিরাপদ রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করা গেছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আরও কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী, এর মধ্যে সৌদি আরবও রয়েছে। ১৯৭৯ সালে মিশরের সাথে এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের সাথে চুক্তি হয় ইসরায়েলের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, এরপর থেকেই ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি হারানো এবং তাদের শরণার্থী জীবন শুরু হয়। ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে ৩ বার ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে আরব দেশগুলি পরাজিত হয়। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলি যুদ্ধের সময় অধিকৃত আরব দেশগুলির এলাকা ছেড়ে দেয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও ফিলিস্তিনের দখল করা জায়গা ফেরত এসব শর্ত দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবেও এই বিষয়গুলি স্থান পেয়েছে, এমন কি অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে কিন্তু ইসরায়েল এসব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করেছে, ফিলিস্তিনি এলাকায় জোর করে ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা-নিপীড়ন-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলি ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ ও ফিলিস্তিনি এলাকা দখলের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনিদের স্ব-শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব রাষ্ট্রগুলির ভূমিকা দুঃখজনক। ইসরায়েলের ঔপনিবেশিক শাসনের অবশেষ মুছে ফেলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনবাসীকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম ও কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে হবে। দুঃখের বিষয় ফিলিস্তিনিরা নানা মত ও পথে বিভক্ত হয়ে আছে এবং তা ইসরায়েল ও তার মুরব্বিদের ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান ও অবৈধ বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে। অবশেষে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ইসরায়েলের চুক্তির পর ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল ফাত্তাহ, হামাস ও ইসলামিক জিহাদের নেতারা বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল এই দুটি রাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরোধের সমাধান না করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে নানাভাবে বিভেদ-অনৈক্যের মধ্যে নিক্ষেপ করে আঞ্চলিক সংঘাত, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের ইন্ধন যোগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ মহল। মধ্যপ্রাচ্যে বিবদমান পক্ষগুলিকে ঢালাও অস্ত্র সরবরাহ, অর্থ যোগান বন্ধ না করলে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা দুরূহ। আমরা চাই ইসরায়েল ফিলিস্তিন এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে জাতিসংঘ ও বহুজাতিক শান্তি প্রস্তাব মেনে নেবে। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘকে নতুন করে সক্রিয় হতে হবে। আরব লীগ ও ওআইসির নীরব ভূমিকা ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখদুর্দশা সীমাহীন করে তুলবে।
মতামত সম্পাদকীয়



















































