সুপ্রভাত ডেস্ক :
আদালতে আরজি জানানোর দুই বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলারও আসামি।
বৃহস্পতিবার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ওই মামলা রেকর্ড হলেও শনিবার তা জানা গেছে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এসেছে সম্প্রতি। এরপর বৃহস্পতিবার মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাদাত হোসেনকে।”
২০১৮ সালের ১৭ মে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আর্জি জানান ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান তানভীর।
ওই আর্জি বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সেটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিল।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আর্জিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির আবেদনের সঙ্গে ‘রিলিজিয়াস পলিটিক্স অ্যান্ড কমিউনাল হারমনি ইন বাংলাদেশ: এ রিসেন্ট ইমপালস’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ যুক্ত করেন আনোয়ার হোসেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ‘জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সায়েন্সেস: সোশিওলজি অ্যান্ড কালচার’ এ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিতও হয়।
আসাদুজ্জামান তানভীরের অভিযোগ, গবেষণা প্রবন্ধে আনোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলেছেন। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে ‘ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফসল’ হিসেবে দেখিয়েছেন।
ওই গবেষণা প্রবন্ধে ১১ বার জাতির জনকের নাম থাকলেও ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি কোথাও ব্যবহার করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছিলেন তানভীর। খবর বিডিনিউজ।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ ক্যাম্পাসের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় দিয়াজের মায়ের করা হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি আনোয়ার হোসেন। ওই মামলা হওয়ার পর সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে আনোয়ারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দিয়াজের মায়ের আবেদনে আদালত ওই হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সে সময় আনোয়ার হোসেনের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটও করে ছাত্রলীগের একাংশ।
দিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পান আনোয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও মুক্তি পাওয়ার পর আবারও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সমাজতত্ত্ব বিভাগে কর্মরত আছেন।