কক্সবাজারে সামুদ্রিক মাছের তীব্র সংকট
দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজার সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মাছের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অনেকটা আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে মাছের দাম।
সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে মাছের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ মাছ ব্যবসায়ী। ২০ মে ছিল সাগরে মাছ আহরণের শেষ দিন। এ দিনের আগ পর্যন্ত জেলেদের আহরিত যে মাছগুলো রিফ্রিজিটারে রাখা হয়েছিল তা বের করে বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি সংকট দেখা দিয়েছে প্রজেক্ট ও পুকুরের চাষকৃত মাছের। বাজারে যা মিলছে তা চড়া দাম।
এলাকার সচেতন মহল জানান, সারা দেশের তুলনায় কক্সবাজার অনেকটা জনবহুল এলাকা। এর উপর যুক্ত হয়েছে পর্যটনের প্রভাব। দেশ ও বিদেশ থেকে প্রতিদিনই নানা পর্যটকের আগমন ঘটে কক্সবাজার শহরে। যার ফলে সামুদ্রিক মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে এ শহরে। সামুদ্রিক মাছ সংকটের ফলে অসাধু এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মাছের বাজার অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। যখন যা খুশি সেই দামেই মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। ফলে চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সৎ ব্যবসায়ীদের সুনাম।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজারে মাছ কিনতে আসা দিদারুল আলম সিকদার জানালেন, সামুদ্রিক মাছের আকাশচুম্বী দাম। মাছ কেনা অনেকটা দুঃসাধ্য। রিফ্রিজিটারে রাখা কেজিতে ৭ থেকে ৮টা ধরে এমন রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে হাজার বারশ’ টাকায়। ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে ১ হাজার গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকায়। লইট্যাসহ ছোট ছোট নানা জাতের মাছ বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এতদামে মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা দুঃসাধ্য হয়েছে। তাই মাছ না কিনে বয়লার (পল্ট্রি) মুরগী নিয়ে বাড়ী যাচ্ছি।
কক্সবাজার পৌর শহরের বাহারছড়া বাজারে আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের কক্সবাজারস্থ পিপি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রহিম বলেন, সরকার ঘোষিত সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেনা। তাই বাজারে সামুদ্রিক মাছের সংকট ও চড়া দাম। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রজেক্ট ও পুকুরের মাছেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে রুই মাছ ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হতো, সেই রুই মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪শ’ টাকায়। যে চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা সেই চিংড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার বারশ টাকায়। তাই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে মাছের বাজার।
কক্সবাজার শহরের কানাইয়ার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার বলেন, সাগরে চলছে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা। তাই জেলেরা মাছ আহরণে সাগরে যেতে পারছেন না। স্বাভাবিক কারণেই মাছের দাম ও সংকট বাড়বেই। পাইকারী আড়তদার ব্যবসায়ীরা মাছের দাম বেশী নেওয়ার ফলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবারও বাজারে মাছের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সামুদ্রিক মাছ অপ্রতুল হওয়ার কারণে প্রজেক্ট ও পুকুরের মাছেরও দাম বেড়েছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান জানান, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইলিশ প্রজননের সময়ও সরকার এই নিষেধাজ্ঞা জারী করে। নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী সময়ে এ বছর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে জেলেদের জালে। ফলে বাজারে ইলিশের দাম কমে যাওয়ায় সবশ্রেণীর ক্রেতারা মাছ কিনতে পেরেছেন। এবারও নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সাগরে নানান জাতের প্রচুর মাছ মিলবে, তখন মাছের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আশা করছেন সরকারের দেয়া এ নিষেধাজ্ঞা যদি সবাই মেনে চলেন, তাহলে সয়লাব হয়ে যাবে মাছের বাজার।