সুপ্রভাত ডেস্ক »
যে থাইল্যান্ডে প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের একটি ডে কেয়ার সেন্টারে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার নির্বিচার গুলি ও ছুরি হামলায় ৩৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন ওই সাবেক কর্মকর্তা তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর নিজেও গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে তারা। খবর বিডিনিউজের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের উত্তরপূবাঞ্চলীয় নং বুয়া লামফু প্রদেশের উথাই সাওয়ান শহরে এ ঘটনা ঘটেছে। শহরটি রাজধানী ব্যাংকক থেকে ৫০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে।
জেলা কর্মকর্তা জিদাপা বুনসাম রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দুপুরের খাবারের সময় সন্দেহভাজন বন্দুকধারী যখন ডে কেয়ার সেন্টারটিতে যান তখন সেখানে প্রায় ৩০ জনের মতো শিশু ছিল। তার হামলায় নিহতদের মধ্যে ২২টি শিশু রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মাদক সম্পর্কিত কারণে ওই সন্দেহভাজনকে পুলিশ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
জিদাপা জানান, এই লোক প্রথমে যে চার-পাঁচ কর্মীকে গুলি করেন, তার মধ্যে আট মাসের গর্ভবতী এক শিক্ষিকাও ছিলেন। ‘লোকজন প্রথমে ভেবেছিল পটকার শব্দ’, বলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, ডে কেয়ার সেন্টারটির মেঝেতে রাখা শিশুদের লাশগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে আর সেগুলোর চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে আছে।
রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এসব ফুটেজের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, গুলিবর্ষণকারীকে ধরতে অভিযান শুরু করা হয়েছে। দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, অপরাধীকে ধরতে প্রধানমন্ত্রী সব গোয়েন্দা সংস্থাকে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।
গুলির ঘটনা ‘মর্মান্তিক’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। তিনি সব সংস্থাকে আহতদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বন্দুকের মালিকানার হার এবং অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা থাইল্যান্ডে বেশি হলেও সেখানে নির্বিচার গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনা বিরল।
২০২০ সালে নাখন রাচাসিমা শহরে সম্পত্তির মালিকানা চুক্তি নিয়ে ক্রুদ্ধ এক সেনাসদস্যের গুলিতে চারটি স্থানে অন্তত ২৯ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছিল।
থাইল্যান্ডে একটি ডে কেয়ার সেন্টারে হামলায় হামলাকারী যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করেছেন সেটি তার নামে বৈধভাবে নিবন্ধিত ছিল বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
হামলাকারী একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। মাদক সম্পর্কিত কারণে গত জুন মাসে তাকে পুলিশের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
থাইল্যান্ডের জাতীয় পুলিশ প্রধান জেনারেল ডমরংসাক কিত্তিপ্রপাস বলেন, হামলাকারী হামলায় যে নাইন এমএম পিস্তলটি ব্যবহার করেন সেটি তার নিজের নামে নিবন্ধিত। নিজের পিস্তলের পাশাপাশি হামলায় একটি ছুরিও ব্যবহার করেন ওই হামলাকারী।
হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যেই ২২টি শিশু।
থাইল্যান্ডের উত্তরপূবাঞ্চলীয় নং বুয়া লামফু প্রদেশের উথাই সাওয়ান শহরে বৃহস্পতিবার হামলার ওই ঘটনা ঘটেছে। শহরটি রাজধানী ব্যাংকক থেকে ৫০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে।
ডে কেয়ার সেন্টারটির বেঁচে যাওয়া একজন শিক্ষক স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, হামলাকারীর ছেলেও ওই ডে কেয়ার সেন্টারের শিক্ষার্থী ছিল এবং হামলাকারী নিয়মিত ছেলেকে সেখানে রাখতে যেতেন।
কিন্তু হামলার সময় শিশুটি বাড়িতে ছিল। হামলাকারী ডে কেয়ার সেন্টারে হামলার পর বাড়ি ফিরে তার স্ত্রী ও ছেলেকে গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করে।
পুলিশের বিশ্বাস, হামলাকারী অ্যামফিটামিন মাদক গ্রহণের পর তার বাড়ির কাছের ওই ডে কেয়ার সেন্টারটিতে হামলা চালায়।
এ ঘটনায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। তিনি শুক্রবার ঘটনাস্থল পরির্দশনের যাবেন বলেও তার কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।