ঈদুল আযহা মূলত আরবি বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে ও অব্যবহিত পরে স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে।
জিলহজ্জ মাসে হজের সময় হয় ঈদ-উল-আজহা, যাকে বাংলার গ্রামে বলা হয় ‘কুরবানি’। আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসি বা উর্দুতে ‘কুরবানি’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি দেয়।
পবিত্র কোরানে আছে, নবী ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ-কে কতটা ভালবাসেন তার একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহতালা। আল্লাহ স্বপ্নে ইব্রাহিমকে (আ.) বললেন- তোমার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ করো। পর পর তিন রাত ইব্রাহিম (আ.) একই স্বপ্ন দেখলেন। এমন স্বপ্নসমূহ দেখবার পর তিনি চিন্তা করতে লাগলেন তাঁর সব চাইতে প্রিয় জিনিস কী হতে পারে! তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁরই পুত্র ইসমাইল। ফলে ইব্রাহিম তাঁর সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে উদ্যত হলেন। কোরবানি দেওয়ার পর দেখা গেল ইসমাইলের জায়গায় একটা দুম্বা (মতান্তরে ছাগল) কুরবানি হয়ে পড়ে আছে। এর পর থেকে ইব্রাহিমের অনুসারীরা এই ঘটনার স্মরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চান্দ্র মাসের উক্ত দিনে পশু কুরবানি দেওয়া চালু করেন।
বাংলাদেশে ৭ জুন পালিত হবে ঈদুল আজহা। অবশ্য তিন দিন পর্যন্ত কোরবান দেওয়ার রেওয়াজ আছে। এসময় প্রচুর প্রাণি কোরবান দেওয়া হবে। বাংলাদেশে যেখানে-সেখানে পশু জবাই করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু দেশে কসাইখানা বা নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পশু জবাই করা যায় না। যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার কারণে পরিবেশেরও ক্ষতি হয় পক্ষান্তরে তা মানবস্বাস্থের জন্যেও ক্ষতিকর। কাজেই আমরা অনুরোধ করব যাতে যারা কোরবান দেবেন তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলেন।
সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বর্জ্য অপসারণে তাদের উদ্যোগ নিয়ে। সেটি সিটি করপোরেশনের কাজ। তাদের কাজ তারা করবে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরাও যেন দায়িত্ব পালন করি সেদিকে নজর রাখা দরকার।
এ সময় প্রচুর মানুষ শহর থেকে গ্রামে যায়। মানুষ না থাকার সুযোগে এ সময় কিছু স্থানে চুরির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদিকে লক্ষ্য রাখবে আশা করি।
অন্যদিকে এসময় গ্রামে পুকুরে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত। ঈদ সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক। শান্তি বয়ে আনুক।
ত্যাগ ও ভক্তিতে মহিমান্বিত হোক
ঈদুল আজহা