তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

নিহত দুই শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম ও ফয়সাল মাহমুদ শান্ত।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনজনের লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বিকেলে নগরের মুরাদপুর ও শুলকবহর এলাকায় সংঘর্ষে এই তিনজন নিহত হন। তাঁরা হলেন দুই শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফয়সাল আহমেদ (২০) এবং ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক (৩২),

গতকাল সংঘর্ষে মারা গেছেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। মৃত্যুর ১৩ ঘণ্টা আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওয়াসিম আকরাম লিখেছেন, ‘ছাত্রদল আমার প্রাণের সংগঠন। এ পরিচয়ে আমি শহীদ হতে চাই।’

জানা যায়, ওয়াসিম চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া। চমেক হাসপাতালে ওয়াসিমকে নেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। এ সময় ওয়াসিমের বড় ভাই মো. নোমান বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে সে মুরাদপুর এলাকায় গিয়েছিল। ছাত্রদল করত। আমরা তাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। পরে জানতে পেরেছি, মুরাদপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। সেটা জেনে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। পরে জানলাম, আমার ভাই আর নেই।

সংঘর্ষে নিহত আরেকজনের নাম ফয়সাল মাহমুদ শান্ত। তিনি নগরের ওমরগনি এমইএস কলেজ ম্যানেজমেন্ট প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন, গ্রামের বাড়ি বরিশালের বিমানবন্দর এলাকার বাবুগঞ্জে। বাবার নাম জাকির আহমেদ। লাশের পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে।

ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী। ২৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে আছেন। নগরীর লালখান এলাকায় বসবাস করতেন। শুলকবহরে কর্মস্থলের বাইরে রাস্তায় এসে ঘটনা দেখছিল ফারুক। হঠাৎ গুলি এসে লাগে তাঁর গায়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ফারুকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। আট বছর বয়সী ছেলে ফাহিম বাগমনিরাম সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ফাহিমা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেজি শ্রেণিতে পড়ে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সূত্রে জানা গেছে মর্গ থেকে রাত তিনটায় লাশ তিনটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশি পাহারায় লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন স্বজনেরা।

নিহত তিনজনের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।