তালা

জোবায়ের রাজু »

তামান্নাদের বাড়িটি তিনতলা। তামান্নার বাবা পৈতৃক সূত্রে বাড়িটির মালিক। তিনতলায় তামান্নারা থাকে। অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়াটিয়ারা। নিচতলায় থাকে উদয়ের পরিবার। উদয় ভালো স্টুডেন্ট। ক্লাসের সবাই তাকে পছন্দ করে। কিন্তু উদয়কে পছন্দ করে না তামান্না। কারণ উদয়ের কিছু বদভ্যাস লক্ষ্য করেছে সে। তার মধ্যে একটি বদভ্যাস হচ্ছে উদয় সুযোগ পেলেই ছাদে গিয়ে তামান্নার শখের গোলাপগুলো ছিঁড়ে ফেলে। ফুলপ্রেমী তামান্না তাদের পুরো ছাদটাকে বাগিচা বানিয়ে ফেলেছে অনেক বছর আগেই। কিন্তু উদয় রোজ বিকেলে যখন ছাদে আসে, অনেকগুলো ফুল ছিঁড়ে ফেলে। এ দৃশ্য তামান্না যতবার দেখেছে, ততবার উদয়কে বকাঝকা করে ছাদ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও উদয় তার এই বদভ্যাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি দেখে তামান্না কঠোর হয়ে ছাদে তালা মারতে বাধ্য হয়। তবে সেটি কেবল বিকেলবেলাতেই সীমাবদ্ধ। যতক্ষণ উদয় স্কুলে থাকে, ততক্ষণ তামান্না ছাদ খোলা রেখে বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা করে। ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখে। আর রাগ বাড়ে উদয়ের প্রতি। বানরটা কতগুলো ফুল ছিঁড়ে তামান্নার মন ভেঙেছে। যার ফলে রোজ বিকেলে ছাদের দুয়ারে তালা দিতে ভুল হয় না ইডেনের ছাত্রী তামান্নার।
২.
আজ সোমবার। দুপুরের দিকে তামান্না ফেসবুক খুলে দেখে স্কুলে বিমান ক্রাশের স্থিরচিত্রগুলো। তার কিছুক্ষণ পর নিচতলা থেকে চিৎকার আর চেঁচামেচি কানে আসে তামান্নার। দৌড়ে সেখানে গিয়ে জানতে পারে উদয়ের স্কুলেই বিমানটি পড়েছে। উদয়ের বাবা-মা দুজনেই পাগলের মত বাসা থেকে বের হয়ে ছুটে যান উদয়ের স্কুলের দিকে।
উদয়ও বন্ধুদের সঙ্গে আকাশে চলে গেছে। সারা শরীর পুড়ে গেছে আগুনে। হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায় উদয় বেঁচে নেই।
উদয়ের শোকার্ত বাবা-মা আর এই শহরে তাদের কিছু আত্মীয়রা মিলে উদয়কে দাফনের জন্য নিয়ে গেল তাদের গ্রামের বাড়িতে।
৩.
তামান্না ছাদে এসে কাঁদছে। পুরো দেশ শোকে মর্মাহত। গাছের তাজা গোলাপগুলো ছুঁয়ে ধরতেই তামান্নার চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল জল। এই গোলাপ ছেঁড়ার অভিযোগে সে উদয়কে শাসন না করলে আজ তাকে এত কষ্ট পেতে হতো না। ওর অত্যাচারে ছাদের দুয়ারে তালা দিতে বাধ্য হয়েছে তামান্না। ওই যে ছাদের দুয়ারে ঝুলছে মস্ত তালাটি। তামান্না তালাটি ছুঁড়ে ফেলল ছাদ থেকে নিচে। পাশের ডোবায় সেটা ডুবে গেল। এই তালা রেখে লাভ কি! যার জন্য এই তালার ইতিহাস, সে তো এখন আকাশের তারা। ব্যথিত মনে তামান্না কয়েকটি গোলাপ ছিঁড়ে ফেলল। চোখের জল মুছতে মুছতে সে গোলাপের পাপড়িগুলো ছাদ থেকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল উদয়কে উৎসর্গ করে।