সুপ্রভাত ডেস্ক »
টানা দুই সপ্তাহের তাপপ্রবাহ কাটিয়ে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস, তবে তাতে স্বস্তির সুখবর নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহ থাকবে আরও দুয়েক দিন। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছু কমবে। কিন্তু বাড়বে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ।
ফলে তাপমাত্রা কমলেও অস্বস্তিকর গরম সহসাই কাটছে না। আসন্ন রোজার ঈদের সময়ও এমন আবহাওয়া থাকতে পারে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে ঈদ হতে পারে আগামী শনিবার বা রোববার।
সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশে এপ্রিলের শুরু থেকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলায় এই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তীব্র মাত্রায়। দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘বিরাজমান তাপ প্রবাহ আরও দুয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ঈদের আগে-পরে ২০-২৪ এপ্রিলের দিকে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।’
তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির আভাস রয়েছে। তবে ঢাকায় দুয়েক দিনের মধ্যে তেমন আভাস নেই।
যে কারণে অস্বস্তি বাড়বে
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে তাপপ্রবাহের মধ্যে তাপমাত্রা বেশি হলেও ঘাম খুব বেশি হয়নি, ফলে গরম ততটা অস্বস্তিকর অনভূতি দেয়নি।
এর ব্যাখ্যায় এ আবহাওয়াবিদ জানান, ১৪ এপ্রিল পযন্ত ঢাকাসহ সর্বত্র দেশের আকাশ ছিল মেঘমুক্ত। এর পাশাপাশি দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিম দিকের বাতাস বেশি সক্রিয় ছিল না; জলীয় বাষ্পের পরিমাণ তুলনামূলক কম ছিল (৪০% এ নিচে)। এ অবস্থায় পারদে তাপমাত্রা উপরে উঠলেও ঘাম হয়নি খুব বেশি।
‘আগামী সপ্তাহে সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় ৩৬-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার পাশাপাশি জলীয়বাষ্প অস্বস্তির অনুভূতি বাড়িয়ে দেবে।’
তিনি জানান, ১৪ এপ্রিলের পরে বাংলাদেশে পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত হওয়ায় মেঘমালা আসতে শুরু করে। ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯ এপ্রিল থেকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ার কারণে তাপমাত্রা কমলেও অস্বস্তি বোধ বাড়বে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাংশে হালকা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। মাসের শেষে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। তবে ভারি বর্ষণ হবে কিনা সেরকম কোনো আভাস আপাতত নেই।
আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান জানান, এক সপ্তাহে তীব্র তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা কমে এলেও তাপদাহ চলতে পারে মৃদু থেকে মাঝারি আকারে। জলীয়বাষ্পের কারণে সামনের এক সপ্তাহ অস্বস্তি বাড়বে।
গরমে ভোরে কুয়াশা নয়, ধোঁয়াশাও ছিল
আবুল কালাম মল্লিক জানান, বাংলাদেশ ও উপমহাদেশীয় সংলগ্ন এলাকায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত রাতের আকাশ মেঘমুক্ত ছিল; বিকিরণজনিত কারণে তাপমাত্রা কমে রাতে ২২-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠানামা করেছে। ফলে এ তাপমাত্রায় সকাল ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে আকাশে জলীয় বাষ্প বাতাসে যে ধুলিকণা থাকে- তার সংমিশ্রণে ধোঁয়াশার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
‘এটা কুয়াশা নয়, ধোঁয়াশা। এখন মেঘমালা আসতে শুরু করেছে, জলীয় বাষ্প বাড়বে। রাতের তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করবে। সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এলে অস্বস্তি বোধও কেটে যাবে।’