তলিয়ে যাওয়া নগরে নাগরিকদের ভোগান্তি

সারা দেশের মতো কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামেও টানা ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত) বৃষ্টি হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে। চকবাজার, ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, ফুলতলা, কে বি আমান আলী সড়ক, ওমর আলী মাতব্বর সড়ক, খাজা সড়ক, বহদ্দারহাট, ফরিদারপাড়া, মেহেদীবাগ, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, দুই নম্বর গেট, ওয়ারলেস মোড়, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়ক, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, তিন পুল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও বসতঘরে পানি ঢুকেছে। এমন বৃষ্টি এবং সড়কে পানি জমে থাকায় কর্মস্থলে যেতে পারেননি অনেকেই। দুর্যোগে নগরের স্কুলগুলো খোলা থাকলেও উপস্থিতি তেমন ছিল না। রাস্তাঘাটেও গাড়ি চলাচলের পরিমাণও কম ছিল। আবার পানির কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। সব মিলিয়ে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরবাসী।

অথচ নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিনটি সংস্থা। গত দশ বছরে এসব প্রকল্পে পেছনে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ও হয়েছে। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পগুলো বরাদ্দ পেয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে। তবুও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাননি নগরবাসী।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। সেনা বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে প্রকল্পটির ঠিকাদার নিয়োগ করার পর ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ফলে দফায় দফায় প্রকল্প কাজ ও নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। নগরীর ৩৬টি খাল খনন, সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে প্রকল্পটির অধীনে। বর্তমানে প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির অধীনে পাঁচটি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। বাকি একটি খালের মুখের রেগুলেটর এখনো নির্মাণ হয়নি। বর্ষায় বালু আটকাতে খালগুলোতে মুখে সিল্টট্র্যাপ নির্মাণের কথা থাকলে, এ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
বর্তমানে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি বলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতেই পারে। তবে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ যদি এতদিনে শেষ হতো এবং তা যদি প্রকৃতপক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসনে ফলপ্রসূ হতো তাহলে নগরবাসীকে যন্ত্রণা কম ভোগ করতে হতো। প্রকল্প গ্রহণের এতদিন পরে, এতটাকা খরচ করেও যদি সামান্য সুফল পাওয়া না যায় তাহলে নাগরিকরা কাকে দোষারোপ করবে?
এখন চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভেসে গেছে বহু ঘরবাড়িসহ গৃহপালিত পশু। এই দুর্যোগকালে দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বন্যায় আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।