সুপ্রভাত ডেস্ক :
হলিউডের ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ সিনেমায় প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করা চ্যাডউইক বোসম্যান ৪৩ বছর বয়সে কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর এই বিশেষ ধরণের ক্যান্সার সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের।
তুলনামূলক কম বয়সে মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের হার কেন বাড়ছে, ঠিক কী কী কারণে কোলন বা কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে থাকে – এই ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং আলোচনা করছেন অনেকে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স কমছে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তত্বাবধান বিভাগের প্রধান এবং গবেষণা নিবন্ধটির একজন লেখক রেবেকা সিগেল সিএনএন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বিজ্ঞানীরা জানতেন যে তরুণদের মধ্যে কোলোরেকটাল ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার হার বাড়ছে। কিন্তু এত দ্রুতগতিতে এটি হচ্ছে, সেটা জানতে পেরে আমরা বিস্মিত হয়েছি।”
মিজ. সিগেল বলেন, “এই রিপোর্টটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যে শুধু বর্তমানের ক্যান্সার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তাই নয়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আমাদের ধারণা দেয়।”
তিনি মন্তব্য করেন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার হার বাড়তে থাকলে তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ও যৌন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।
পাশাপাশি তরুণরা আক্রান্ত হলে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়, যেই ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোর বিষয়েও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে চিকিৎসকদের।
কোলন ক্যান্সারের কারণ
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস’এর তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায় না, তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হল:
বয়স – কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি।
খাদ্যাভ্যাস – অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
ওজন – অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ব্যায়াম – যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
মদ্যপান ও ধূমপান – মদ্যপান ও ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পারিবারিক ইতিহাস – পরিবারের কোনো সদস্যের (বাবা, মা বা ভাই, বোন) যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সার হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিরও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
এছাড়া মলত্যাগের জন্য হাই কমোড ব্যবহার করা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে উঠে আসে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায়। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তেহরানের ১০০ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ
এনএইচএস’এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি। সেগুলো হল:
মলের সাথে নিয়মিত রক্ত নির্গত হওয়া – মলের সাথে রক্ত নির্গত হয় সাধারণত পাকস্থলীর কার্যক্রমে পরিবর্তন হলে।
পাকস্থলীর কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন – এরকম সময়ে রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে।
তলপেটে ক্রমাগত ব্যাথা, পেট ফোলা বা অস্বস্তি বোধ করা – এই উপসর্গের সাথে সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, খাওয়ার রুচি হারানো বা ওজন হারানোর সংশ্লিষ্টতা থাকে।
এছাড়া ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ করার পরও বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হওয়া বা রক্তে আয়রনের স্বল্পতার মত উপসর্গও দেখা যায় কোলন ক্যান্সারে।
বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের চিত্র কী?
বাংলাদেশে কী পরিমাণ মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, সেসম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৯.২ ভাগ পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, “বাংলাদেশে ক্যান্সার পরিস্থিতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ বা কোন ধরণের ক্যান্সারে মানুষ বেশি ভুগে, এই বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য না থাকলেও কমবয়সীদের মধ্যে আজকাল কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি।।”
আর মলত্যাগে হাই কমোডের ব্যবহার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে মি. তালুকদার বলেন, “এই বিষয়ে এখনো সেভাবে কোনো গবেষণা না থাকলেও মলত্যাগের পদ্ধতির সাথে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”
মি. তালুকদার বলেন, “আমাদের ধারণা, হাই কমোডে বসে মলত্যাগ করলে মলাশয় পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। প্রয়োজনীয় চাপ না পড়ায় মলদ্বারে কিছুটা মল থেকে যায়। আর মলে অসংখ্য জীবাণু থাকে, আর সেই জীবাণু সেখানে থেকে যাওয়ায় কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।”