সুপ্রভাত ডেস্ক »
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ (২২ এপ্রিল, ২০২৪) বাংলাদেশে এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কাতারের রাষ্ট্রপ্রধান ও দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। বিকেলে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। প্রদান করা হয় গার্ড অব অনার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে এটিই প্রথম উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।
আর গত দুই দশকের মধ্যে কাতারের কোনো আমিরের বাংলাদেশে এটিই প্রথম সফর। সবশেষ ২০০৫ সালে কাতারের তখনকার আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন।
তার এই সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ১১টি সহযোগিতার বিষয়ে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। বন্দি বিনিময় চুক্তির পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দ্বৈত কর পরিহার, জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত নথিও সই হবে এই সফরে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন কাতারের আমির। বৈঠকের পরই দু’দেশের মধ্যে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই হবে। যৌথ সংবাদ সম্মেলনও অংশ নেবেন তারা।
এদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ তামিম। অংশ নেবেন রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে। সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন এই আমির।
এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সফরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, ব্যবসায়িক নেতাদের বৈঠকের পাশাপাশি কাতারের আমিরের নামে মিরপুরের কালশী এলাকায় পার্ক এবং মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উদ্বোধন করবেন তিনি।
এ বিষয়ে রোববার (২১ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এই সফরে কাতারের আমিরকে এক বছরের জন্য বাকিতে জ্বালানি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হবে। দু’দেশের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তিগুলো হচ্ছে– দ্বৈতকর পরিহার, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা, সাগরপথে পণ্য পরিবহন, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর ও যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন-সংক্রান্ত চুক্তি। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে– শ্রমশক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, বন্দর পরিচালনা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, এই সফরে ঢাকার একটি সড়ক কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হবে। মিরপুরের কালশীতে বালুর মাঠের নির্মানাধীন পার্ক ও ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়ালসড়ক পর্যন্ত সড়কটি তার নামে নামকরণ হবে।
এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রায় বিশ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসলেন কাতারের কোন আমির। আর বর্তমান আমিরেরও প্রথম বাংলাদেশ সফর এটি।
তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি, সার, প্লাস্টিক পণ্যসহ ২০২২ সালে কাতার থেকে বাংলাদেশের আমদানি বেড়ে দাড়িয়েঁছে ২৭৪ কোটি ডলার আর দেশটিতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রফতানি করে বাংলাদেশের আয় ৯ কোটি ডলারের মত।
এমন প্রেক্ষাপটে গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জাতিসংঘ সম্মেলনের (এলডিসি-৫) সাইড লাইনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে সেসময় আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালকে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট ধরা হয়। কারণ ঐ বছর জ্বালানি চুক্তি হয়। যার আওতায় এলএনজি দেবে কাতার।
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার কাতার। যেখানে প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশা করছেন, এ সফরে জোরদার হবে দু’দেশের সম্পর্ক। এছাড়া নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন হবে বলেও মনে করেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।