ডিম, মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করে কারা

মুরগির খাদ্য তৈরির প্রধান দুই উপকরণ ভুট্টা ও সয়াবিনের উপজাত (মিল)। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে এই উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২২ সালে ভুট্টার গড় দাম ছিল টনপ্রতি ৩১৯ ডলার। কমতে কমতে তা গত মাসে ১৯৩ ডলারে নেমেছে। একইভাবে ৫৪৮ ডলারের সয়াবিন মিল গত মাসে বিক্রি হয়েছে ৪৮১ ডলারে। অথচ বাংলাদেশে পোলট্রি খাদ্যের দাম কমেনি। দাম কমানোর কথা উঠলে তারা সামনে আনছেন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে।
পোলট্রি খাদ্যের দাম সংগ্রহ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যে দর ছিল, তার চেয়ে এখন ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের দাম ৩৮ থেকে ৪১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে ডিম, মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্য আমদানিতে আগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। তবে অনুমতি সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই কেউ আমদানিও করে না।
সে কারণে অনেকে মনে করেন, এ সুযোগে চড়া দাম আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন ডিম, মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য ব্যবসায়ীরা। অন্য অনেক খাতেই দেশীয় শিল্প যেমন আছে, তেমনি আমদানির সুযোগও আছে। এতে বাজারে ভালো প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু পোলট্রি খাতে কেন আমদানি নিয়ন্ত্রিত, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) একটি সমীক্ষা বলছে, এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবার ও ডিমের দাম ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ, ‘নিয়ন্ত্রিত আমদানি’ বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজারে দাম কমাতে নির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করে আমদানি উন্মুক্ত করার পক্ষে। তবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তা চায় না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থার বিভিন্ন বৈঠকে আমদানির সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ কারণে বাজারে ডিম, মুরগির মাংস ও গরুর মাংসের দাম কমছে না।
২০২৩ সালের মার্চে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জানায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ৯৬ শতাংশ নিম্নবিত্ত পরিবার মাংস খাওয়া, ৮৮ শতাংশ মাছ খাওয়া এবং ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম খাওয়া কমিয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ থেকে ৯৬ টাকা। পাকিস্তানে ছিল ৭৩ থেকে ১১৮ টাকা। বাংলাদেশে ওই সময় ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায়। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ডিমের দাম ভারতের চেয়ে গড়ে ৭৮ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম ছিল প্রতিটি ৩৫ থেকে ৫৬ টাকা। পাকিস্তানে ছিল ২১ থেকে ৪২ টাকা। বাংলাদেশে মুরগির বাচ্চার দাম ৫৫ থেকে ৭৪ টাকা। অর্থাৎ, বাংলাদেশে মুরগির বাচ্চার গড় দাম ভারতের চেয়ে ৪২ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ১০৫ শতাংশ বেশি।
অবস্থা দেখে সাধারণ মানুষের বোঝার সাধ্য নেই যে, তারা আসলে কোন কথা বিশ্বাস করবে। কাকে বিশ্বাস করবে। মানুষ চায় জিনিসপত্রের দাম সহনশীল থাকুক। তুলনামূলক কম থাকুক। এটা করতে গিয়ে সরকারকে কী করতে হবে তা ভাবার কথা জনগণের নয়। সেটা ভাববে সরকার। সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণের পক্ষে কাজ করবে নাকি কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থে কাজ করবে।