সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে চকলেটকে সাধারণত মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্যের তালিকায় ফেলা হয়। স্বাদ ও গন্ধের কারণে ভক্ত শিশু থেকে বৃদ্ধ— সব বয়সী মানুষ চকলেটের ভক্ত।
বাজারে সাধারণ যেসব চকলেট পাওয়া যায়, অতিমাত্রায় চিনি—দুধ ও অন্যান্য উপাদান মেশানোর কারণে সেগুলো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত। তাই চকলেটপ্রেমী বা প্রতিদিন চকলেট খেতে অভ্যস্তদের একটি বড় অংশ শারীরিক স্থুলতা, রক্তে ক্ষতিকর কলেস্টোরেল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন। তাই চিকিৎসকরা বরাবরই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চকলেট গ্রহণের পক্ষে ব্যবস্থাপত্র দেন।
তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ডার্ক চকলেট টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি শতকরা ২১ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গবেষণা সংস্থা টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ পরিচালনা করেছে এই গবেষণাটি।
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের চকলেট পাওয়া যায়— মিল্ক চকলেট এবং ডার্ক চকলেট। ডার্ক চকলেট বলতে সেই ধরনের চকলেটকে বোঝানো হয়, যেগুলোতে চকলেটের মাত্রা বেশি এবং দুধ—চিনির মাত্রা অনেক কম থাকে।
অন্যদিকে ডায়াবেটিস হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যে অবস্থায় মানুষের দেহে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বা বিপুলভাবে হ্রাস পায়। ইনসুলিনের প্রধান কাজ রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ করা। তাই এই হরমোনটির ঘাটতি হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে, যা মানুষকে গুরুতর অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডায়াবেটিসের ধরন অনুসারে একে দু’ভাগে ভাগ করা হয়— টাইপ ১ এবং টাইপ ২। যাদের দেহে জন্মগতভাবেই ইনসুলিনের উৎপাদন কম হয়— তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত; আর জীবনাচরণ, খাদ্যাভাস ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন— তারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে মনে চিকিৎসাবিজ্ঞান।
জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন, তাদের ৯০ ভাগই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের যে বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণা পরিচালনা করেছে, সেই দলের অন্যতম সদস্য কুই সুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। এএফপিকে বলেন, “গবেষণার ফলাফল দেখে আমরা প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ মিল্ক চকলেট এবং ডার্ক চকলেট— উভয়েরই ক্যালোরি লেভেল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় সমান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মিল্ক চকলেট ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকারক, অন্যদিকে ডার্ক চকলেট ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।”
‘এর প্রধান কারণ পলিফেনল নামের একটি জৈব রাসায়নিক উপদানের উপস্থিতি। মিল্ক চকলেটে পলিফেনলের পরিমাণ কম থাকে, আর ডার্ক চকলেট পলিফেনলসমৃদ্ধ।’
তবে এই গবেষক সতর্ক করে বলেছেন, ডার্ক চকলেট নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় গ্রহণ করলেই মিলবে উপকার। এতে আসক্ত হয়ে পড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে। সূত্র : এএফপি