ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের (২০-৭৯ বছর) মধ্যে ১৩ দশমিক ২ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে এ সমস্যায় ভুগছেন।
আইডিএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সে হিসাবে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ জনই কোনো না কোনোভাবে এ সমস্যায় ভুগছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি। কারণ ডায়াবেটিসের রোগীদের একটি বড় অংশই নিজেদের রোগ সম্পর্কে অবগত নয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৪৫ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হবে ২ কোটি ২৩ লাখ। তবে দেশের ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের রোগ নির্ণয় হচ্ছে না বলে জানায় আইডিএফ।
আইডিএফের প্রতিবেদন-২০২৪-এ দেয়া তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল পাকিস্তানেই ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্তের হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। দেশটিতে ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে আক্রান্তের হার বাংলাদেশেও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রতি এক শ জনের মধ্যে ১৩ দশমিক ২ শতাংশই এ সমস্যায় ভুগছেন। এর পরই যথাক্রমে আফগানিস্তান (১১ দশমিক ৭ শতাংশ), ভারত (১০ দশমিক ৫ শতাংশ), শ্রীলংকা (১০ দশমিক ২ শতাংশ), মালদ্বীপ (৯ দশমিক ৫ শতাংশ) ও নেপালের (৭ দশমিক ৭ শতাংশ) অবস্থান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী অসুখের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার জন্য সবারই নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করানো জরুরি। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা, তাদের যত্ন এবং চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
এই পরিস্থিতি যখন বিদ্যমান তখন দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, রোগ ও রোগীর তুলনায় দেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাসুবিধা অত্যন্ত অপ্রতুল। এখনও সরকারি হাসপাতালই হচ্ছে দেশের অধিকাংশ মানুষের ভরসার স্থল। কিন্তু সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে খুব বেশি ভাবেও না। কাজেই ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অতি জরুরি।





















































