বছরের এই সময়টিতে অর্থাৎ শীত যখন জেঁকে বসে তখন ঠান্ডাজনিত কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হয় বেশি। হঠাৎ রোগী এতই বেড়ে যায় যে, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতেও স্থান সংকুলান হয় না।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগী ভর্তি আছে। কিন্তু ভর্তির চেয়ে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা খুব বেশি। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এখন যারা সেবা নিচ্ছে তাদের তিন ভাগের দুই ভাগ হলো ঠান্ডাজনিত রোগী। এর অন্যতম কারণ হলো মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। ধুলোবালি বা ধোঁয়াতে মাস্ক বা যে কোনো প্রতিরোধক ব্যবহার করছি না। ঠিকমতো ত্বকের যত্ন নিই না। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অনেকে ফার্মেসি থেকেই ওষুধ কিনে নিচ্ছে। এসবের কারণে অধিকাংশ রোগীদের বেলায় ন্যূনতম মাত্রার ওষুধ কাজ করছে না।’
অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি, মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে কনকনে শীতেও রোগীদের বেডে ঠাঁই না হওয়ায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বারান্দায়ও শুয়ে আছেন। ঠান্ডাজনিত রোগের মধ্যে অতিরিক্ত কাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, জ্বর, টনসিল, ডায়রিয়া ও ত্বকের নানা ধরনের রোগ নিয়ে অনেকে এসেছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দৃশ্যত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির রোগীরা। বেডের তুলনায় রোগীর পরিমাণ বেশি হওয়ায় তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। চমেক হাসপাতালের শিশু রোগ ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগী স্বাভাবিকের তুলনায় এখনও বেশি আছে। তবে এখনও মাত্রা অতিক্রম করেনি। এ রোগগুলো মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। ঠান্ডা, ধুলোবালি ও ধোঁয়াকে এড়িয়ে চলতে হবে। এরমধ্যে বেশি বয়স্ক ও শিশুদের বেলায় বিষয়টি ভিন্ন। তাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এরমধ্যে নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টটা খুব জটিল। আমরা হাসপাতালে কিংবা আমাদের আউটডোর চেম্বারে এখন শিশুদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেশি দেখছি। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আর তারা কেমন লাগছে, তা প্রকাশ করতে পারে না। এখনতো ঠান্ডা পড়ছে। হয়তো সপ্তাহ খানেক পরে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই শিশুদের যে কোনো সমস্যা দেখলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কোনো বিকল্প নাই।’
আমরা অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশুদের অনেকটা নীরোগ রাখতে পারি। আর সে সঙ্গে ঘরের বাইরে গেলে যেন নিয়মিত মাস্ক পরি সে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ নগরের বায়ুর মান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তার সঙ্গে আছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ। সে সব কারণে বাতাসে দূষিতকণাসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন অনেক উপাদান আছে। সেসব থেকে বাঁচতে নিজেদেরই রক্ষাব্যূহ গড়ে তুলতে হবে। আগামীতে আরও কয়েকদিন এমন শীত থাকবে। কাজেই সবাইকে এই সময়ে সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে। সে সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করব যাতে তারা ধুলোবালি কমাতে সড়কে পানি দেওয়ার ব্যবস্থাটি জোরদার করে।
এ মুহূর্তের সংবাদ