সুপ্রভাত ডেস্ক »
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস কিংবা রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প যিনিই জিতুন না কেন তা দেশটিতে ইতিহাস রচনা করবে।
হ্যারিস জয়ী হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, কৃষ্নাঙ্গ এবং এশিয়ান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জয়ী হলে তিনি হবেন দেশের ইতিহাসে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট।
দুইবার অভিশংসিত হওয়া একজন প্রেসিডেন্টও হবেন ট্রাম্প। ভিন্ন মেয়াদে অরেকবার তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হবেন। তাছাড়া, পুনর্নির্বাচনের প্রথম চেষ্টায় হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্পই হবেন হোয়াইট হাউজে ফেরা ইতিহাসের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রে পরাজিত প্রেসিডেন্টের ফের নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আছে কেবল গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের। ১৮৮৮ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর ফের তিনি জয়ী হয়েছিলেন ১৮৯২ সালে।
ট্রাম্প এবং হ্যারিসের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যাকগ্রাউন্ডই কেবল নয় আরও কিছু কারণে এবারের নির্বাচনের প্রকৃতি ঐতিহাসিক বলেই বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষকরা। কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা এবার ঘটেছে।
উদাহরণস্বরূপ: নির্বাচনী প্রচারের মাঝপথে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী অদলবদল করার সিদ্ধান্ত ছিল ব্যতিক্রমী এবং বিরল। তিনি যেভাবে জোরাল সমর্থন পেয়ে ট্রাম্পের কাছাকাছি অবস্থানে উঠে এসেছেন সেটিও চমকে দেওয়ার মতো।
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্র্যান্ডন রোটিংহাউস বলেন, “হ্যারিসের মনোনয়নই ঐতিহাসিক ছিল। তিনি জিতলে ১৯২০-এর দশক থেকে জাতি যে বাধার দেয়াল ভাঙার জন্য লড়াই করে আসছে, তা ভেঙে যাবে।”
ওদিকে, ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে পরবর্তীতে চারটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তারই একটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প দুইবার হত্যাচেষ্টার শিকারও হন।
দুই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারও এবার ছিল খুবই ক্ষিপ্র। জরিপে দুইজনের এক সূতো ব্যবধান নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে থাকা- এসবই এবারের নির্বাচনে ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।
নজর থাকবে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণে সাতটি দোদুল্যমান রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যগুলো হল: অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেইনিয়া ও উইসকনসিন।
এই রাজ্যগুলোর ১০টি কাউন্টির ভোট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এ কাউন্টিগুলোর দিকে নজর রাখছেন নির্বাচনি বিশ্লেষকরা।
ম্যারিকোপা কাউন্টি, অ্যারিজোনা: অ্যারিজোনার রাজধানী ফিনিক্সের ম্যারিকোপা কাউন্টি এ রাজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ কাউন্টিতে ২ দশমিক ২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রায় ৩ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এ কাউন্টিতে জয়ী হন।
কোব কাউন্টি, জর্জিয়া: আটলান্টার উত্তরের শহরতলীর এই কাউন্টিতে ডেমোক্র্যাটরা জর্জিয়া রাজ্যে জয় পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে যেতে পারে। যেমনটি বাইডেন পেয়েছিলেন ২০২০ সালে। প্রায় ১৪ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয় পান। তবে ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন কোব কাউন্টিতে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়ে ট্রাম্পের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।
বল্ডউইন কাউন্টি, জর্জিয়া: জর্জিয়ার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই কাউন্টি কোব কাউন্টির চেয়ে ছোট। তবে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের উপস্থিতি রয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারই কৃষ্ণাঙ্গ। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের তুলনায় ২০২০ সালে বাইডেনের জয়ের ব্যবধান এ কাউন্টিতে কম ছিল।
ওয়েইন কাউন্টি, মিশিগান: ডেট্রয়েটের ১৭ লাখ বাসিন্দার বাস এখানে। এ কাউন্টির প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। ২০২০ সালে বাইডেন ৬৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে এ কাউন্টিতে জিতেছিলেন, যা মিশিগনে তার জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছিল।
ওয়াশো কাউন্টি, নেভাডা: নেভাডার উত্তর-পশ্চিমে রেনো এলাকার কাছে অবস্থিত ওয়াশো কাউন্টিতে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের বাস কম। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এ কাউন্টিতে ডেমোক্র্যাটদেরকে সমর্থনের প্রবণতা বেড়েছে। ২০২০ সালে বাইডেন এখানে ট্রাম্পের চেয়ে ৪ শতাংশের বেশি ভোট বেশি পেয়ে জিতেছিলেন।
ওয়েক কাউন্টি, নর্থ ক্যারোলাইনা: নর্থ ক্যারোলাইনার এই কাউন্টি সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে রাজ্যজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ২০২০ সালে ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় জিতলেও বাইডেন ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
এরি কাউন্টি, পেনসিলভেইনিয়া: পেনসিলভেইনিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এরি কাউন্টির ভোটাররা গত চার নির্বাচনে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ২০২০ সালে বাইডেন এই কাউন্টিতে ১ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প সেখানে ২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন।
বাক্স কাউন্টি, পেনসিলভেইনিয়া: ফিলাডেলফিয়ার উত্তরে অবস্থিত বাক্স কাউন্টিতে শ্রমিক শ্রেণির বিপুল সংক্যক ভোটার থাকার জন্য এখানকার ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে ট্রাম্পের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প পেনসিলভেইনিয়ায় জিতেছিলেন। এবারও তিনি রাজ্যটিতে জয় পাওয়ার আশা করছেন। ২০২০ সালে বাইডেনও এই কাউন্টিতে ৪ শতাংশ ব্যবধানে জিতে পেনসিলভেইনিয়ায় তার জয় নিশ্চিত করেছিলেন।
কাম্বারল্যান্ড কাউন্টি, পেনসিলভেইনিয়া: পেনসিলভেইনিয়ার রাজধানী হ্যারিসবার্গের শহরতলীর এই কাউন্টির ভোটাররা গত দুই নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু এবার সেখানে বাড়তে থাকা হোয়াইট কলার কর্মীদের আকৃষ্ট করে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের ভোট কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। ২০২০ সালে ট্রাম্প এ কাউন্টিতে ১১ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।
ওয়াউকেশা কাউন্টি, উইসকনসিন: মিলওয়াকির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরতলীর এই কাউন্টি ট্রাম্পের আরেকটি শক্ত ঘাঁটি। ট্রাম্প গত দুই নির্বাচনে সেখানে ২০ শতাংশের বেশি পয়েন্টের ব্যবধানে জয়ী হন। ২০২০ সালে বাইডেন উইসকনসিন জিতেছিলেন। এবার রিপাবলিকানরা এই রাজ্যে জিততে হলে ওয়াউকেশা কাউন্টিতে ট্রাম্পকে আগের মতো একই মাত্রায় ভোট পেতে হবে।