মানুষ যেমন তার প্রতিবেশী নির্বাচন করতে পারে না তদ্রুপ একটি দেশও তার প্রতিবেশী বেছে নিতে পারে না। প্রতিবেশী ভালো হলে তো কথা নেই কিন্তু মন্দ হলে ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। বাংলাদেশেরও মন্দ ভাগ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হয়েছে মিয়ানমার, যে দেশ নানাভাবেই বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকছে।
দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে মাদক পাচারে মিয়ানমারের বিভিন্ন বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। সে দেশের লাগাতার অসহযোগিতার কারণে বাংলাদেশ সরকার ইয়াবার সরবরাহ বন্ধ করতে পারেনি। সে সঙ্গে গত সাত বছর ধরে দশ লাখেরও অধিক মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রতিপালন করতে হচ্ছে। যারা এখন বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে সে দেশের গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। তার ওপর এখন যুক্ত হয়েছে পণ্য চোরাচালান।
বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আর তার বদলে সেদেশ থেকে আসছে মাদক। আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের নাফ নদী ও সমুদ্রপথের ৩০টি বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা খাদ্যসামগ্রী পাচার করছে। বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে ভয়ংকর মাদক আইস ও ইয়াবা।
উপজেলার উপকূলীয় এলাকার ৩০ টির বেশি পয়েন্ট দিয়ে রাত নামলে পাচারের হিড়িক পড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা। মেরিন ড্রাইভ জেলে ঘাট দিয়ে রাত নামলেই মিয়ানমারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল বিশেষ করে অকটেন পাচারের হিড়িক পড়ে। এতে স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলছে।
কোনো কোনো পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে খাদ্যপণ্য, অকটেন জব্দ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে পাচারে জড়িত যানবাহনকে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার জব্দকৃত মালামালের একটি অংশ সরিয়ে ফেলারও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এভাবে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি পাচার হওয়ার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবেও প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার জ্বালানি তেলে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অনেক খাদ্য আছে দাম কমানোর স্বার্থে শুল্ক মওকুফ করেছে। এরফলে সেসব পণ্য মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে সস্তা। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যক্তি চোরাচালানে লিপ্ত হয়ে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করছে। এসব লোকদের ছাড় দেওয়া কোনোক্রমেই সমীচীন নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চোরাচালান বন্ধে কঠোর হতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ