টাট্টু ঘোড়া

রুদ্র দাস »

সুদূর এক গ্রামে ছিল ছোট্ট এক ছেলে, নাম তার খোকা। খোকার সবচেয়ে বড় শখ ছিল ঘোড়া চড়া। কিন্তু তাদের বাড়িতে কোনো ঘোড়া ছিল না। বাবা বলতেন, ‘তোমার জন্য একদিন ঘোড়া আনব,’ কিন্তু সেই দিন আর আসত না।
একদিন খোকা গ্রামের মেলায় গেল। মেলায় গিয়ে দেখল ছোট ছোট কাঠের ঘোড়া বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খোকার নজর পড়ল একটামাত্র টাট্টু ঘোড়ার ওপর-লালচে বাদামি রঙ, পিঠে রঙিন জিন, আর চোখে চকচকে কাঠের পুঁতি।
খোকা দোকানদার কাকুকে বলল, ‘কাকু, এই ঘোড়াটা কত দাম?’
দোকানদার হাসলেন, ‘পাঁচ টাকা হলেই নিতে পারবে।’
খোকার পকেটে মাত্র তিন টাকা ছিল। সে মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই এক দাদু এসে বললেন, ‘এই ঘোড়াটা তো খুব পছন্দ হয়েছে তোমার! আমি তোমাকে দু‘টাকা দিয়ে দিচ্ছি, নিয়ে নাও’
খোকা খুশিতে লাফিয়ে উঠল! টাকা দিয়ে ঘোড়াটা কিনে নিল। এরপর সে সারা গ্রাম ঘোড়াটা নিয়ে ঘুরতে লাগল।
‘এবার আমারও ঘোড়া আছে!’- সে গর্ব করে বন্ধুদের দেখাল।
কিন্তু বন্ধুরা হাসতে লাগল, ‘এ তো কাঠের ঘোড়া! এটা কি দৌড়াতে পারে?’
খোকার মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু রাতে স্বপ্নে সে দেখল, তার কাঠের ঘোড়াটা জীবন্ত হয়ে গেছে! ঘোড়াটা বলল, ‘চলো খোকা, তোমাকে এক জাদুর দেশে নিয়ে যাই!’
খোকা ঘোড়ায় চড়ে বসতেই ঘোড়াটা হুড়হুড় করে উড়ে চলল। তারা চলে গেল এক বিস্ময়কর রাজ্যে-সেখানে চারপাশে রঙিন ফুল, নীল নদী, আর ঝলমলে পাহাড়। রাজ্যের নাম ছিল ‘টাট্টুপুর’। ওখানে সব ঘোড়াই ছিল টাট্টু ঘোড়া, ছোটখাট কিন্তু দারুণ চটপটে! রাজ্যের রাজা এক বড়সড় সাদা ঘোড়া। সে খোকাকে দেখে বলল, ‘তুমি এই রাজ্যের বন্ধু। তোমার ঘোড়ার জন্য আমরা একটা বিশেষ উপহার দেব।’
পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে খোকা দেখল, তার কাঠের ঘোড়াটা আগের মতোই পড়ে আছে। সে দুঃখ পেল, কিন্তু তখনই খেয়াল করল ঘোড়াটার চোখে যেন সত্যিকারের চকচকে আলো!
সে বুঝতে পারল, স্বপ্ন হলেও তার টাট্টু ঘোড়া এখন তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
এরপর থেকে খোকা যখনই একা বোধ করত, তার টাট্টু ঘোড়ার সঙ্গে গল্প করত। আর মনে মনে ভাবত, ‘হয়তো একদিন সত্যি সত্যি আমার ঘোড়াটা দৌড়াবে!’