টাকা খরচের লাগাম টানতে ফেরত গেছে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতু প্রকল্প

কাঁটছাঁট করা হচ্ছে কম অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট »

পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল উন্নয়ন হয়েছে এদেশে। অবকাঠামো উন্নয়নে দেড় দশকে কয়েক লাখ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এখন দৃশ্যমান অনেক মেগা স্ট্রাকচার, সুবিধাও পাচ্ছে জনগণ। তবে বেশিরভাগ প্রকল্পে খরচের পরিমাণ নিয়ে ছিল প্রশ্ন।

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে টাকা খরচের লাগাম টেনে ধরা শুরু করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ১৩টি প্রস্তাব। সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় এমনিতেই বেঁচে গেছে এমপিদের জন্য থোক বরাদ্দের প্রায় হাজার কোটি টাকা। ভাবা হচ্ছে- মেগা অবকাঠামোর বিকল্প অর্থায়ন নিয়েও। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থ সাশ্রয়ে যৌক্তিক কারণেই কাঁটছাঁট হতে পারে উন্নয়ন বাজেট। পরামর্শ- নজর দিতে হবে অনুন্নয়ন ব্যয়েও।

জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ফেরত পাঠানো প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে তিলমারী নদীবন্দর, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন, কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু, রংপুর সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ফোর লেন করতে ভূমি অধিগ্রহণ। ফেরত পাঠানোর পাশপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম-দোহাজারী ডুয়েলগেজ রেলরুট এবং মেট্রোরেল লাইন ওয়ান ও ফাইভ প্রকল্পের খরচ।

দায়িত্ব নিয়েই, প্রকল্পে ব্যয় সংকোচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এমনকি বাস্তবায়নাধীন কম-প্রয়োজনীয় প্রকল্পও বন্ধ করার পক্ষে খোলাসা করেন নিজের অবস্থান।

মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ঠিকাদারদের স্বার্থে বড় (মেগা) প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নেয়া হয়নি। এটা (মেগা প্রকল্প) নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এগুলো নিয়ে এগুব নাকি এগুব না।

১৯ আগস্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্প বা বড় প্রকল্পের বিষয়ে কোনো নীতি নেই। এগুলো নির্ভর করবে করবে কোন পর্যায়ে আছে। প্রকল্পের বিষয়ে সময় একটা বড় বিষয়। এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এগুলো নিয়ে এগুব নাকি এগুব না। কিছু খরচ হয়ে গেলেই প্রকল্প শেষ করতে হবে বিষয়টা এমন না। কিন্তু যৌক্তিক অর্থনৈতিক বিবেচনা হলো- কত খরচ করেছি তা না, বাকি কাজ করতে কত লাগবে এটা বড় বিষয়। পুরো প্রকল্প থেকে কত সুবিধা পাব এটাই বিষয়। প্রকল্পে লাভ-ক্ষতি দেখতে হবে। কিছু খরচ হয়ে গেছেই বলেই মানসিক চাপ থাকবে, প্রকল্প শেষ করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। এটা অর্থনীতির যুক্তিতে চলে না।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়ে আবার নতুন করে বলতে হবে না। এটা বন্ধে আমরা কাজ করছি। আমরা কিছু কাজ করব। বড় প্রকল্পে নকশা কেন সংশোধন করা হলো এটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব। ভবিষ্যতে যাতে ভুল না করি এটা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করব।

তিনি আরো বলেন, ব্যয় সংকোচনে উন্নয়ন ব্যয় কমানোর বড় জায়গা। প্রকল্প যাচাই করা জরুরি। প্রকল্পে বিশৃঙ্খলা আছে। অনেক বড় প্রকল্পে সমস্যা আছে। প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে এটা স্কুটিনি করে ছাটাই করতে হবে। চলমান থাকলে রাখতে হবে বিষয়টি এমন নয়। প্রকল্পে বিশৃঙ্খলা আছে। নকশা, ব্যয়, সময়সীমা নিয়ে অনিয়ম আছে। অনেক প্রকল্পে দুর্নীতি আছে যা কম খরচে হতে পারত, কিন্তু নকশার কারণে ত্রুটি আছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে প্রকল্পে বেশি খরচ হয়। অনেক প্রকল্প আছে, কেন আছে জানি না। দেশীয় ঠিকাদার আছে সেগুলো বাদ দেয়া হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।