দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, জীবনমান বেড়েছে, এই নগরের জেল্লা বেড়েছে কিন্তু এখনো কিছুই বাড়েনি নগর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। ফৌজদারহাটের উত্তর সলিমপুরের দেলেপাড়া গাঁ। যেখানে বসবাস করেন প্রায় আড়াই হাজার জেলে পরিবার। ঝলমলে নগরের খুব কাছেই এরা কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
সুপ্রভাতের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অবহেলিত সে জনগোষ্ঠীর কথা। সেখানে আলা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ ঘরই কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে রক্ষা করা। এখানে অর্ধেকের চেয়ে বেশি লোক বাস করে কাঁচা ঘরে। যার বেশিরভাগেরই অবস্থা শোচনীয়। জং ধরে ক্ষয়ে যাওয়া টিনের চাল ভেঙে পড়ার উপক্রম। ভাঙা বেড়াকে ঢাকা হয়েছে ছেঁড়া কাপড় দিয়ে। সেমিপাকা ঘরের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। কেউ কেউ পাকা ঘর তুলেছেন তবে তার অনেকটাই কাঠামো। যার সংখ্যা ৫ শতাংশ। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি বা আবর্জনা নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও সন্তোষজনক নয়। আসলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই জীবনযাপন করছেন তারা। শিশুদের জন্য নেই প্রাক- প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেউ কেউ গোষ্ঠীর বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করে তবে বেশিরভাগেরই অক্ষরজ্ঞান নেই। কোনো কমিউনিটি হাসপাতালও নেই এখানে। নেই কোনোরূপ বিনোদনের ব্যবস্থা। কেবল তিনটি মন্দির রয়েছে। শিব মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির ও দুর্গা মন্দির। পূজার সময়ে এসব মন্দিরে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে আনন্দ উদযাপনের সুযোগ হয় তাদের।
রিলাল জলদাস নামের এক জেলে প্রতিবেদককে তাঁদের বঞ্চনার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের জীবিকা হলো মাছ ধরা। এটা করেই আমরা বেঁচে থাকি। এতোবছর আমরা এখানে আছি; অথচ এখনও মাছ রাখার মতো একটা আড়তের ব্যবস্থা আমাদের নেই। যার কারণে পাইকারি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয়। জাল বোনা ,জাল রাখা থেকে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। মন্দিরগুলোর অবস্থাও ভালো না। সেখানে যে বছরে ছয়মাসে একটা বড়ো পূজা করবো তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নাই। আমরা অমানবিক পরিশ্রম করি। রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, শীতে কাঁপি। কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো পরিবর্তন নেই। আমাদের যে ভাতা দেয়া হয় তা খুবই নগণ্য। সরকারের কাছে আমাদের আর্জি, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে গৃহায়ণের ব্যবস্থা করে আমাদের জীবনমান উন্নয়নে এসব সংকট নিরসন করা হোক।
যে পরিবেশে জেলেরা জীবন কাটাচ্ছে তাকে কোনোভাবেই সুস্থ, স্বাভাবিক ও মানবিক বলা যাবে না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই জেলেরা শত শত বছর ধরে রাষ্ট্র ও সমাজের কাছ থেকে বঞ্চিতই হয়ে আসছে। বিগত কয়েকবছর ধরে সরকারি নির্দেশে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। সে সময় তাদের জন্য নির্দিষ্ট ভাতা থেকেও বঞ্চিত হয় তারা। এই অসাম্যের অবসান হওয়া দরকার। এদের জীবনমান বাড়াতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নইলে বঞ্চিত এই মানুষগুলোর মলিন মুখের পাশে এত এত উন্নয়নকে পরিহাসের মতো মনে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ